সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ দুই দিনব্যাপী উৎসবে মুখর হয়ে উঠেছে। কেউ পুরনো সহপাঠীকে জড়িয়ে ধরছেন, কেউ আবার নেচে গেয়ে মেতে উঠেছেন আনন্দে। ব্যাচ ভেদে নিজেদের সাল ধরে চিৎকারে উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন তারা।
শনিবার (৪ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সুবর্ণজয়ন্তীর মূল আয়োজন।
সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রাটি বালিয়াকন্দি কলেজ থেকে শহরের শহীদ সাগর চত্বর মোড় হয়ে আবারো কলেজ প্রাঙ্গণে ফিরে আসে। পথে ছিল উল্লাস আর হাসির রোল। সাবেকদের ভিড়ে যেন অতীত ও বর্তমান পাশাপাশি হাঁটছিল।
পরে কলেজ প্রাঙ্গণে নির্মিত আলো জলমলে সুউচ্চ মঞ্চে ‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন’ শীর্ষক আলোচনা, মুক্ত আলাপ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে একই মঞ্চে বালিয়াকান্দির বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সমাজসেবকরা ওই কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন ঘাত-প্রতিঘাতের ঘটনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানজুড়ে সাবেকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে বহু বছর পর দেখা হওয়ায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। কেউ সাদা চুলে হাত বুলিয়ে বলছিলেন, ‘সময় কত দ্রুত চলে গেল!’ কারো চোখে ঝিলিক দিচ্ছিল কিশোর বয়সের উচ্ছ্বাস। কেউ ব্যবসা কিংবা চাকরির ব্যস্ততা থেকে ছুটি নিয়ে এসেছেন শুধু পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য।
২০০২ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বন্ধুদের দেখে মনে হচ্ছে আবারো ছেলেবেলায় ফিরে গেছি। এত দিন পর পুরনো বন্ধুদের একসাথে দেখে আনন্দে কী করব বুঝতে পারছি না। আমরা এখন ব্যস্ত জীবনে আছি। আমি আইন পেশার সাথে জড়িত। সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত।’
তিনি বলেন, ‘চুল পেকে গেছে আমাদের। কিন্তু বন্ধুদের দেখে মনে হচ্ছে আবারো সেই ছেলেবেলায় ফিরে গেছি। স্মৃতির টান, বন্ধুদের হাসি ও প্রাঙ্গণে ভেসে আসা পরিচিত কণ্ঠ—সব মিলিয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর দুই দিনব্যাপী ছিল এক অপূর্ব পুনর্মিলনের দিন।‘
সাবেক শিক্ষার্থী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফাল্গুনী বাগচি বলেন, ‘এ দুই দিনের অনুষ্ঠান ঘিরে যে আবহ তৈরি হয়েছে তা শুধু সুবর্ণজয়ন্তীর নয়, আমাদের হৃদয়ে থেকে যাবে এক অমূল্য স্মৃতি হয়ে। সুবর্ণজয়ন্তীর এ মিলনমেলা বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজের ইতিহাসে স্মরণীয় একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে।’
গৌরব ও সাফল্যের ৫৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজে ৩ ও ৪ অক্টোবর সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালিত হয়েছে। এর প্রথম দিন শুক্রবার বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে জাতীয়, সুবর্ণজয়ন্তী ও কলেজের পতাকা ও কবুতর উড়িয়ে ওই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।
পরে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো: আব্দুল লতিফ মোল্লা। বিশেষ অতিথি অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার, মাউসির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক ফকির নুরুজ্জামান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্সের প্রফেসর ফারুক আহমেদ, ওই কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শাহ নেওয়াজ পারভেজ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মোস্তাফিজুর রহমান ও সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আহ্বায়ক অধ্যাপক আলিম আল রাজি। পরে অতিথিদের সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে দ্বিতীয় দিনে কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত র্যালি, আলোচনা সভা, মুক্ত আড্ডা ও পুরানো স্মৃতিচারণমূলক মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
মিলন মেলায় বালিয়াকান্দি সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা নতুনদের উদ্দেশে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।