চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে গতকাল রাত ১০টার দিকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরে সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) জুলুশে যাওয়ার সময় হাটহাজারী মাদরাসার সামনে আরিয়ান ইব্রাহীম (২০) নামের এক যুবক মধ্যমা আঙুল দেখিয়ে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া ও সন্ধ্যায় ওই আরিয়ান ইব্রাহীমকে পুলিশ গ্রেফতার করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুন্নীপন্থী-কওমীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৮০জন। এতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরো ২০জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আহত বেশিরভাগ কওমিপন্থি মাদরাসার ছাত্র বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত আবু তাহের (১৬) ও হাসান মারুফ (১৭) দু’জনের পরিচয় জানা গেছে।
জানা গেছে, শনিবার ঈদে মিলাদুন্নবির জুলুশে যাওয়ার সময় দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার সামনে এসে মাদরাসাকে লক্ষ্য করে এক যুবক আঙুল উঁচিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার জের ধরে চাপা উত্তেজনা চলছিল দিনভর। আরিয়ান ইব্রাহীম নামের এ যুবক ফেসবুক আইডিতে নিজেকে ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি পরিচয় দেয়। বিকেলে ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রদল আরিয়ান ছাত্রদলের কেউ নয় বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান।
পরে কওমী ছাত্রসমাজ তাকে গ্রেফতারের জন্য দাবি তুলে হাটহাজারী ও ফটিকছড়ির মাদরাসাগুলোতে আন্দোলনের শুরু করেন। এ দাবির প্রেক্ষিতে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে জশনে জুলুস থেকে ফেরার পথে ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শফিকিয়া দরবার শরীফ এলাকা থেকে আরিয়ানকে আটক করা হয়। আরিয়ান ইব্রাহীম ওই এলাকার মরহুম মো: মুছার ছেলে বলে জানা গেছে।
কওমী মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের দাবি আরিয়ান ইব্রাহীমকে গ্রেফতারের কারণে উত্তেজিত হয়ে সন্ধ্যায় জুলুস থেকে যাওয়ার সময় সুন্নীপন্থীরা ট্রাক বাস থেকে নেমে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড করেকজন কওমী মাদরাসার ছাত্রকে আহত করে। এরপর উভয় পক্ষ থেকে এ হামলার সূত্রপাত হয়।
এদিকে সুন্নীপন্থীদের দাবি, জুলুস থেকে ফেরত সুন্নীপন্থিদের বিভিন্ন বাসে কওমী মতাদর্শের লোকজন হামলা করার পর সুন্নীপন্থীরাও সংঘবদ্ধ হয়ে পালটা হামলা চালায়।
সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১৮০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় দেড়শতাধিক আহতকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং গুরুতর আহত ২০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্র জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফেসবুকে পোস্ট দেয়া আরিয়ানকে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে হাটহাজারী বাস স্টেশনসহ চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের এগারমাইল, হাটহাজারী বাজার, মীরেরহাট, মুন্সী মসজিদ, চারিয়া, মুহুরীরহাট বটতল, নাজিরহাটের ঝংকার মোড়ে বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় পথেঘাটে কওমীপন্থীদের উপর সুন্নীপন্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে হামলা শুরু করে।
সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে যা সংঘবদ্ধ হামলা পালটা হামলায় রূপ নেয়। রাতে গ্রামের সুন্নীপন্থী পরিচয়ে লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। এ সময় তারা বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ব্যারিক্যাড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।
এদিকে হাটহাজারী পৌর এলাকার বাস স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক অবরোধ করে রাখে দারুল উলুম মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। এর ফলে রাত ১১টা পর্যন্ত ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ জানান, ঘটনার মূল হোতা আরিয়ানকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
এদিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন এ নির্দেশনা জারি করেন।
১৪৪ ধারা জারির ফলে পৌরসভার মীরের হাট থেকে এগারো মাইল সাবস্টেশন পর্যন্ত এবং উপজেলা গেট থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশসহ আশপাশের এলাকায় সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, মিছিল ও গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সাথে ওই এলাকায় বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র বা দেশীয় অস্ত্র বহন এবং পাঁচজনের বেশি মানুষের একত্রিত হওয়াও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, আদেশ কার্যকর রাখতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানানো হয়েছে।