বড়াইগ্রামে স্বামী পুকুর থেকে মাছ চুরি করে ধরা পড়ায় লজ্জায় আত্মহত্যা করেছেন কিশোরী স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন(১৪)। কিন্তু ঘটনার এক মাস পরে ওই পুকুর মালিকের বিরুদ্ধে উল্টো আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন স্বামী।
অপরদিকে, ওই স্বামীসহ পুকুর মালিক মেয়েকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার করেছেন বলে আদালতে পৃথক মামলা করেছেন সুমাইয়ার বাবা। এখন জামাই-শ্বশুরের পরস্পরবিরোধী তথ্যে দেয়া দু’টি মামলায় গ্রেফতার এড়াতে পুকুর মালিক বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মাহবুব হোসেন দ্বারিকুশী বাবুপাড়ায় সুরুজ মন্ডলের বাড়ি সংলগ্ন একটি পুকুর পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। কিন্তু মাঝে মাঝেই পুকুর থেকে কে বা কারা মাছ চুরি করে নেয়। সর্বশেষ গত ২১ মে মাহবুব গোপনে খবর পেয়ে লোকজনসহ সুরুজ মন্ডলের(২১) বাড়িতে গিয়ে পুকুর থেকে চুরি করা মাছ জব্দ করেন। স্বামীর মাছ চুরির বিষয়টি জানাজানি হলে সেদিনই লজ্জায় অপমানে সুরুজের স্ত্রী সুমাইয়া ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। সে সময় স্বজনদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না করায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। কিন্তু এ ঘটনার এক মাস পরে গত ২২ জুন সুরুজ মন্ডল আদালতে মাহবুবের নামে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন।
অপরদিকে, সুমাইয়ার বাবা আ: করিম মেয়ের জামাই সুরুজকে প্রধান আসামি করে পুকুর মালিক মাহবুবসহ কয়েকজনের নামে মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। বর্তমানে এসব মামলায় গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মাহবুব।
এ বিষয়ে চন্ডিপুর গ্রামের মাসুম হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম জানান, সেদিন মাহবুবের সাথে সুরুজের বাড়িতে গিয়ে পুকুর থেকে চুরি করা মাছ দেখতে পাই। এ সময় সুরুজের মা তার ছেলে রাতে মাছ চুরি করে বাজারে বিক্রি করেছে আর কিছু বাড়িতে রেখেছে জানিয়ে এটি তার অন্যায় হয়েছে বলে স্বীকার করেন। কিন্তু পরে সুরুজের স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে খবর পাই।
অভিযুক্ত সুরুজ মন্ডল বলেন, ‘আমি মাছ চুরি করিনি, খাওয়ার জন্য দুই-একটা মাছ নিয়েছিলাম। পরে আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করলে এলাকার লোকজনের নানান কথার জন্য মামলা দিয়েছি। আর শ্বশুর আমাকে প্রধান আসামি করে যে মামলা করেছেন সে বিষয়ে যা বলার আদালতে গিয়ে বলবো।’
সুরুজ মন্ডলের মামলার সাক্ষী দ্বারিকুশী গ্রামের বাসিন্দা মো: বাবু মিয়া বলেন, ‘মামলায় আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে। কিন্তু আমি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। অপর মামলার সাক্ষীরাও একই ধরণের কথা বলেন।’
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ার হোসেন জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এ মামলার তদন্তে প্রকৃত বিষয় জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী মামলাগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।