আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত রাঙ্গাবালী : স্বাস্থ্য অধিকার, শুধু কাগজে-কলমে

২০২৩ সালে ৫০ শয্যার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু হলে মানুষ আশায় বুক বাধঁলেও পাঁচ একর জমির ওপর সেই কাজও এখন থেমে আছে।

রবিন আহম্মেদ, পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী)

Location :

Rangabali
নির্মাণাধীন রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
নির্মাণাধীন রাঙ্গাবালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স |নয়া দিগন্ত

চারপাশে পানি, মাঝখানে জীবন। কিন্তু সেই জীবনের জন্য সবচেয়ে দরকারি মৌলিক অধিকার চিকিৎসা, তা আজও নেই এই দ্বীপে। নেই কোনো হাসপাতাল। নেই একজন সরকারি এমবিবিএস ডাক্তারও। স্বাস্থ্য সবার জন্য এটা শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। কিন্তু দেশের দক্ষিণের একটি দ্বীপ উপজেলায় এখনো সেই অধিকার অধরাই থেকে গেছে। বলছিলাম পটুয়াখালীর নদী ও সাগর বেষ্টিত দ্বীপ রাঙ্গাবালীর কথা। যেখানে অ্যাম্বুলেন্সতো দূরের কথা, নেই সরকারি হাসপাতাল ও এমবিবিএস ডাক্তারও। আধুনিক যুগেও আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত উপক‚লীয় নদী ও সাগরবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীর প্রায় দুই লাখ মানুষ।

কৃষি ও মৎসের ওপর নির্ভরশীল এ জনপদের মানুষের চিকিৎসা সেবা পেতে হলে পাড়ি দিতে হয় ভয়াল আগুনমুখা নদী। একজন ডাক্তারের মুখ দেখার লড়াই কখনো কখনো হয়ে ওঠে জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। জটিল রোগতো দূরের কথা, গর্ভবতী নারীদের সিজার করার মতো ব্যবস্থাও নেই। গর্ভবতী নারী, নবজাতক বা মুমূর্ষু রোগীসহ সবাইকে যেতে হয় নদী পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা গলাচিপা, জেলা সদর পটুয়াখালী কিংবা বিভাগীয় শহর বরিশালে। কিন্তু নৌ যোগাযোগ সারাদিন থাকলেও সন্ধ্যার পর তাও বন্ধ। আর বৈরী আবহাওয়ার সময় যা দিনেও বন্ধ। তখন প্রকৃতি আর গ্রাম্য ডাক্তার ও হেকিম-কবিরাজই শেষ ভরসা।

২০১২ সালে রাঙ্গাবালী উপজেলা হিসেবে কার্যক্রম শুরু করলেও এখনো নেই একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। ২০২৩ সালে ৫০ শয্যার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ শুরু হলে মানুষ আশায় বুক বাধঁলেও পাঁচ একর জমির ওপর সেই কাজও এখন থেমে আছে। ৫০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২৪ সালের মাঝামাঝি কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেই হাসপাতাল ভবন যেন এক বোবা প্রতীকী স্মারক।

এ বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় অনেকের সাথে। তাদের দাবি দ্রুত সময়ে যেন এই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়। ঢাকা,বরিশাল ও জেলা সদরের ন্যায় এই দ্বীপেও যেন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছায় এমনটাই চাওয়া উপজেলাবাসীর।

গ্রাম্য চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট আল-আমিন হিরন বলেন, এখানকার মানুষের স্বাস্থসেবা নিশ্চিতের জন্য হাসপাতালের নির্মানকাজ দ্রুত সময়ে শেষ করা দরকার। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। মানুষ চিকিৎসা নিতে নদী পাড়ি দিয়ে দূর দূরান্তে ছুটে যায়। এতে অনেক ভোগান্তির শিকার তো হয় এমনকি তাদের খরচও বেড়ে যায় কয়েকগুন।

ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ফিরোজ মাহমুদ বলেন, এ জনপদের মানুষ আধুনিক চিকিৎস সেবা বঞ্চিত। স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে জ্বর,সর্দি,কাশিসহ প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া আধুনিক চিকিৎসা সেবা মেলে না। অনেক গর্ভবতী মায়েরা সিজারের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় পথেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। সাপে কামড়ানো রোগীর জন্য এন্টিভেনম না থাকায় অনেক সময় রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যায়। এখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্মানকাজ শেষ করে কার্যক্রম শুরু করা দরকার।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ইকবাল হাসান জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রকল্পের অপারেশন প্লান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে আবার কাজ শুরু হবে।