বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে সিলেট, ভোগান্তিতে নগরবাসী

রোববার (১৯ অক্টোবর) বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে সিলেট। লোডশেডিংয়ে নগরীসহ জেলা জুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিলো। এদিকে বইছে তাপপ্রবাহ।

আবদুল কাদের তাপাদার, সিলেট ব্যুরো

Location :

Sylhet
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে সিলেট, ভোগান্তিতে নগরবাসী
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে সিলেট, ভোগান্তিতে নগরবাসী |নয়া দিগন্ত

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে সিলেট। লোডশেডিংয়ে নগরীসহ সিলেট জুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই। এদিকে সিলেটে বইছে তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৩৬/৩৭ ডিগ্রিতে উঠানামা করছে। এমন অসহনীয় গরমের মধ্যে বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে সিলেটবাসীকে।

রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, সিলেটে ১৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে মাত্র ১২৫ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৭০ মেগাওয়াট। সিলেট নগরীতে

রোববার ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে প্রায় অর্ধেকের মতো।

বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগের সবকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৭০০

মেগাওয়াট। যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে প্রতিদিন।

সিলেটের সচেতন মহল মনে করেন সিলেটবাসীর সাথে এটা বিমাতাসুলভ আচরণ। নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নয়ন বৈষম্য নিয়ে সিলেটের মানুষ এখন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিলেও গরমের তীব্রতা কমেনি। গরমের সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুত বিভাগের ভেলকিবাজি।

রোববার (১৯ অক্টোবর) দিনভর ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরীর জনজীবন। একেক এলাকায় দিনে রাতে মিলে ২০/২২ বার লোডশেডিং হয়েছে।

বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। কোন সময় বিদ্যুৎ আছে, কোন সময় নেই তা বুঝতে পারা যায় না। চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত না পাওয়ায় এমন সমস্যায় পড়তে হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুত সরবরাহ মারাত্মক কম পাওয়ায় লোডশেডিং বেশি করতে হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানী খাতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের লুটপাটের ফল ভোগ করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। টেকসই জ্বালানী পদ্ধতিতে না গিয়ে কুইক রেন্টাল পদ্ধতি বেছে নেয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

নগরবাসী বলছেন, রোববার গরমের সাথে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত ছিল জনজীবন। ব্যবসা বাণিজ্যেও প্রভাব পড়েছে এই লোডশেডিং। সিলেটে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।

বিদ্যুত বিভাগের সূত্র জানায়, রোববার (১৯ অক্টোবর) সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৯৫ মেগাওয়াট। সরবরাহ করা হয়েছে ১২৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ৭০ মেগাওয়াট। ফলে বিভিন্ন এলাকায় অনেক বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে। এই অবস্থা আরো দুই-তিন চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, রোববার ভোর থেকেই এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিং শুরু করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সিলেট। রোববার ভোর ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নগরীর জালালাবাদ আবাসিক এলাকায় ১৫/১৬ বার লোডশেডিং করা হয়। এই এলাকায় গড়ে শুক্রবার ঘণ্টা দুয়েক বিদ্যুৎ ছিল।

এভাবে দীর্ঘ সময় বিদ্যুত না থাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রান্না গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। একইভাবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা ও উপশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনভর ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে।

এমনকি সন্ধ্যা ও রাতে লোডশেডিং হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ফলে বন্দরবাজার এলাকার ব্যবসা বাণিজ্য ও অফিস আদালতে বড় প্রভাব পড়ে। চরম ভোগান্তি পোহান পুরো নগরীর বাসিন্দারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বিদ্যুত কেন্দ্রে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়। আর পুরো বিভাগের বিদ্যুতের চাহিদা ৭০০-৮০০ মেগাওয়াট। এসব বিদ্যুত জাতীয় গ্রীডের মাধ্যমে অন্য অঞ্চলে চলে যায়। চাহিদার দ্বিগুণেরও বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করা হলেও সিলেটে চাহিদার কম বিদ্যুত দিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

নগরীর বাসিন্দা বিলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটবাসীর প্রতি এরকম বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। সিলেটে সর্বনিম্ন বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে হবে। অবিলম্বে সিলেটে বিদ্যুত সমস্যার সমাধান করতে হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ আব্দুল কাদির বিকেল ৫টার দিকে নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। জাতীয় গ্রিড থেকে রোববার সিলেটে ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। ঘাটতি ছিল ৭০ মেগাওয়াট। সেটা পূরণ করতে গিয়ে লোডশেডিং করতে হয়। লোডশেডিং ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় পিডিবির প্রধান কার্যালয় থেকে। এখানে স্থানীয় কার্যালয়ের কিছু করার থাকে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘গরম বেশি থাকায় চাহিদাও বেশি ছিল। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম ছিল। গরম কমে আসলে অবস্থান উন্নতি হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।’