চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা ৫ দিনের ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ধানের বীজতলা এবং সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন মৎস্য চাষি ও পোল্ট্রি খামারিরা। গত বছর বন্যায় এই দুই সেক্টরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে চাল এবং শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ১৯৬ হেক্টর আউশ ধান, ২৩০ হেক্টর আমন বীজতলা, ৩৯ হেক্টর রোপা আমন, ৪৫ হেক্টর শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ভেঙে গেছে। এতে মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলার মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম রুবেল বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের চলাচলের একমাত্র নিজামপুর রেলস্টেশন সড়কটির বেহাল দশা। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন এলে ওয়াদা দিলেও ভোট শেষ হলে আর রাস্তার কাজ করেন না। এবার তো পাহাড়ি ঢলে পুরো রাস্তা ভেঙে মিশে গেছে। এলাকাবাসী বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে কোনোমতো চলাচলের উপযোগী করেছেন।
উপজেলার ৬ নম্বর ইছাখালী ইউনিয়নের ২, ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড বর্তমানে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। টেকেরহাট থেকে প্রজেক্ট সড়কের পশ্চিম পাশের বিস্তীর্ণ এলাকা বর্তমানে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১ হাজার থেকে ১২ শ’ পরিবারের ঘরবাড়ি, হাজার হাজার একর কৃষি জমি ও মৎস্য প্রকল্প হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃক নির্মিত সিডিএসপি বেড়িবাঁধের পূর্ব পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক খালের ওপর অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছে একটি চায়না পানি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান যেখানে খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণ করে সংযোগ তৈরি করেছে, সেখানে উক্ত প্রতিষ্ঠান খাল ভরাট করে বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক গতিপথ সম্পূর্ণরূপে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে এই অবৈধ বাঁধের কারণে মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতা এলাকার মানুষ ও মৎস্য চাষিদের জীবন-জীবিকায় বিপর্যয় ডেকে এনেছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে হাজারো মানুষ। গত বছর স্থানীয় জনসাধারণ উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অবৈধ বাঁধ কেটে দিয়েছিল, যার ফলে সাময়িকভাবে দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেয়েছিল এলাকাবাসী। কিন্তু এবার আবারো একই জায়গায় পূর্বের মতোই অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করায় পুরো অঞ্চল জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমাদের জীবনযাত্রা এখন পুরোপুরি দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ঘরে পানি, মাছের ঘেরে পানি, স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া আমরা এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাব না।
জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের (বেজা) এক কর্মকর্তা জানান, বেজার আওতাধীন সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নিয়ম মেনে চলতে হবে। অবৈধ বাঁধ দিয়ে পানি চলাচলের পথে বন্ধ করা যাবে না।
এলাকাবাসী ও মৎস্য খামারিরা দ্রুত খালটির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে দিতে বাঁধ অপসারণ এবং দায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আউশ রোপা, আমন বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ না হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার বলেন, উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় পানিবন্দি মানুষের তালিকা করে খাদ্য পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে আমাদের টিম রয়েছে, খবর পেলে তাৎক্ষণিক খাবার পৌঁছে যাবে।