এমভি নাসরিন-১ ট্রাজেডির ২২ বছর আজ। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের পক্ষ থেকে স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
লালমোহন উপজেলার পূর্ব চর উমেদ গ্রামের হাফিজউদ্দীন বাজার এলাকার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: কাঞ্চন মিয়ার ভাই নিহত মো: জাহাঙ্গীর আলমের স্বজনরা তার রূহের মাগফেরাত কামনা করে স্থানীয় হাফিজ উদ্দীন বাজার জামে মসজিদেদোয়া ও মোনাজাদ করা হয়। এছাড়া নুরু পন্ডিত বাড়ির জামে মসজিদে ও নুরু মাস্টার বাড়ির জামে মসজিদসহ কয়েকটি জামে মসজিদে সকল নিহতদের রূহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
২০০৩ সালের এই দিনে ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা ভোলার লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ লঞ্চ চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদীতে ডুবে ৪০২ জনের মৃত্যু হয়। দেশে নৌ-দুর্ঘটনার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
নাসরিন লঞ্চডুবির ২২ বছর হলেও নিহতদের স্বজনদের পরিবারে কান্না আজও থামেনি।
পরিবারের ২৬ জন নিয়ে বরযাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠে ২৪ জনকেই হারান লালমোহনের ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের মহেষখালী গ্রামের রিনা বেগম। রিনার সাথে বেঁচে ফেরেন তার ফুফাতো ভাই সোহেল। চিরদিনের মতো হারিয়ে যায় রিনার সাত বছরের মেয়ে হাফসা, বোন স্বপ্না, রুমা, তাদের স্বামী-সন্তান, মামা আ. কাদের, মামি সুফিয়া, খালা রাহিমা, খালাতো ভাই মিলন, মিজানসহ পুরো পরিবারের সদস্যরা।
সেদিন রিনা ঢাকা থেকে ভাগ্নে কলেজশিক্ষক মতিনের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য লালমোহনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। পরিবারের কোনো সদস্যেরই লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
লঞ্চটিতে সেদিন এশার নামাজের ইমামতি করেছিলেন লালমোহন চরভূতা ইউনিয়নের মাদরাসা সুপার মাওলানা মাকসুদুর রহমান। নিজে বেঁচে ফিরলেও সাথে ভাগ্নে নোমানকে আর খুঁজে পাননি।
নিজের স্বামীকে হারানোর কথা তুলে ধরেন শামসুন নাহার। স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়ে বেঁচে ফিরার কথা জানান লালমোহনের ব্যবসায়ী মো: শাহজাহান।
রমাগঞ্জের পূর্ব চর উমেদ গ্রামের আজাহার উদ্দিন রোডের পূর্ব মাথায় এলাকার আনিচল হক তার স্ত্রী আমেনা বেগম, নাতনী জেসমিন আক্তার (কমেলা) ওই লঞ্চে উঠে আর ফেরেননি বাড়িতে।
তাদের প্রতিবন্ধী ছেলে সিরাজ, ভূট্টো জানান, তারা তাদের মা-বাবা ও ভাগনীকে অনেক খোঁজ করেছেন। কিন্তু তাদের লাশও কোথাও পাননি। প্রতিবছর এ দিনে তারা তাদের মা-বাবার জন্য মসজিদে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেন।
স্বজন হারাদের দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালত ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি আজও। এ রায় দ্রুত কার্যকর দেখতে চান নিহত ও নিখোঁজ পরিবারের স্বজনরা।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ২০০৪ সালে ঢাকার তৃতীয় জেলা জজ আদালতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা দায়ের করে।