রংপুরের সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে অপহরণ করে সিটি করপোরেশনে নিয়ে নির্যাতন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিউজের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার চেষ্টা এবং মব তৈরি করে মারধর-হেনস্থা মামলায় প্রধান আসামি এনায়েত আলী রকি মিয়াকে রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে ঢাকার রায় সাহেব এলাকা থেকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১০। পরে রংপুর মহানগর কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টাযর দিকে রকিকে ঢাকা থেকে নিয়ে এসে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এ উপস্থাপন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই সুদিপ্ত শাহীন। আদালতের বিচারক দেওয়ান মনিরুজ্জামান তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কড়া নিরাপত্তায় পুলিশ তাকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়।
এর আগে এই মামলার ৫ নম্বর আসামি রতন মিয়া এবং ৬ নম্বর আসামি সাগরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মৌসুমী আফ্রিদা ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজান, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির শান্ত এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তন্ময় কুমার সরকারকে বদলি করা হয়েছে। সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে মারধর এবং মব সৃষ্টি করে সাংবাদিকদের হেনস্তার প্রতিবাদে নানা কর্মসূচি পালন করছেন গণমাধ্যম কর্মীরা।
গেল ১৭ সেপ্টেম্বর লিয়াকত আলী বাদল দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধার নামে অটোর লাইসেন্স, পাঁচ কোটি টাকার বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে। ওই সংবাদের জেরে গেল ২১ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক বাদলকে জুলাই কারাবন্দি পক্ষের পরিচয় রকির নেতৃত্বে ১৫- ২০ জন যুবক কাচারি বাজার থেকে অপহরণ করে অটোরিকশায় তুলে সিটি করপোরেশনে নিয়ে যায়। এরপর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুমের সামনে তাকে নিউজের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার চেষ্টা এবং নির্যাতন করে। পরে তাকে উদ্ধার করতে গেলে সিটি করপোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারী প্রধান ফটক আটকে সাংবাদিকদের হেনস্তা করে।
এ ঘটনায় সাংবাদিক বাদল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০-২৫ জন অজ্ঞাতনামার নামে মামলা করেন।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং গ্রেফতার, দ্রুত বিচার আইনে বিচারের দাবি ও জড়িত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপসারণের দাবিতে আগামী ৭ অক্টোবর সংহতি সমাবেশ করবে সাংবাদিকরা।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: মজিদ আলী জানান, সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে অপহরণ নির্যাতন ও মারধরের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ওই ঘটনার মামলায় প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টির আদ্যোপান্ত জানতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করা হবে। এর আগে এই ঘটনায় রতন মিয়া ও সাগর নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে রতন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে এবং দ্রুত তদন্ত শেষ করে তার সিট দেয়া হবে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো: শহিদুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জড়িত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন-আরপিইউজের সভাপতি স্যালেকুজ্জামান সালেক জানান, গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত অভিযোগ পত্র দিতে হবে এবং দ্রুত আইনে বিচার করতে হবে। এছাড়াও জড়িত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।