জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও দলটির প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ‘আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে ইসলামের, পার্লামেন্ট হবে জামায়াতে ইসলামীর। ইসলামী শক্তির। আর আগামী দিনে যে আইন তৈরি হবে, এই আইনের ভিত্তি হবে কুরআন এবং সুন্নাহ।’
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকালে কিশোরগঞ্জে শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে রুকন (সদস্য) সম্মেলনে মতিউর রহমান আকন্দ এ কথাগুলো বলেন।
জামায়াতে ইসলামীর কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা এ রুকন সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন মতিউর রহমান আকন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবির জিতেছে।’
সকল হলে মহিলাদের হলসহ ইসলামী ছাত্রশিবির এবং ছাত্রী সংস্থা বিজয় লাভ করেছে। এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয় বিজয়ের অর্থটা কী? এই অর্থটা বুঝতে হবে।
তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কম বেশি দেড় লাখ ছাত্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কমবেশি পাস করা এবং রানিং ছাত্রদের মিলিয়ে দেড় লাখ ছাত্রের নেতৃত্বে আছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সুতরাং আগামী দিনের বাংলাদেশ এই দেড় লাখ ছাত্রের। বাংলাদেশের এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেই। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব ভোট লেভেলে গিয়ে পড়বে।’
ফেব্রুয়ারির নির্বাচন প্রশ্নে জামায়াত সম্পর্কে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে অহেতুক মিথ্যাচার থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘আমাদের অন্য রাজনৈতিক দলের বন্ধুরা মাঝেমধ্যে বলেন- জামায়াত নাকি ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। এই কথাটা মিথ্যা, অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ, সকালের সূর্যই দিনের পূর্বাভাস দেয়। বলে দেয় আজকের দিনটি কেমন যাবে। নির্বাচনের তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে ততই আলোকিত সূর্য বলে দিচ্ছে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে ইসলামের। সুতরাং আমরা কেন নির্বাচন বানচাল করতে যাবো।’
‘রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচার ও পতিত দল’ উল্লেখ করে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘আরেকটি দল নতুন বক্তব্য দিচ্ছে- জামায়াত যদি ক্ষমতা যায় তাহলে নাকি আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে। তারা রাজনীতির চালে এতো বড় ভুল করবেন এটাতো ভাবতেও অবাক লাগে। যে আওয়ামী লীগ আল্লামা সাঈদীকে ৪৮ দিন রিমান্ডে রেখে তার অবস্থান থেকে টলাতে পারলো না। যে আওয়ামী লীগ আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার আগে তার পরিবারের মাধ্যমে জামায়াত নেতাদের কাছে বিভিন্নভাবে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, জামায়াতকে বলা হয়েছে, ‘আপনারা শুধু আর একটি দলের (বিএনপি) সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে যাবেন না। তাহলে আপনাদের ফাঁসি হবে না, কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করবেন।’ এই ধরনের প্রলোভন পাওয়ার পরেও যে সংগঠন, যে সংগঠনের নেতারা নতি স্বীকার করলো না, হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে গেল, সেই নেতাকর্মীরা ফাঁসি দানকারী, মিথ্যা রচনাকারী, অপবাদকারী সেই পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সাথে হাত মিলিয়ে পূনর্বাসন করবে এটা কী করে আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন! সুতরাং জামায়াত এটা (আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত) করবে না বরং অন্যরা এটা করতে পারে।’
আকন্দ বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘কারণ তারা দেখতে পাচ্ছেন জামায়াত ক্ষমতায় চলে যাচ্ছে। জামায়াতকে যদি ঠেকাতে হয় তাহলে তাদের সাথে আরেকটি শক্তি দরকার, সেটা হলো পতিত স্বৈরাচার (আওয়ামী লীগ)। তারা হইলে তাদের জন্য সুবিধা। তবে মনে রাখবেন বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিনই আওয়ামী লীগকে আর রাজনীতি করতে দেবে না। এটাই হওয়ার জন্য আগামীর দিনে ধাবিত হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ আজন্ম ভারতের বিরুদ্ধে এবং সেকুলারিজমের বিরুদ্ধে। আর ভারতের বিরুদ্ধে হওয়ায় কারণে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগেরও বিরুদ্ধে।’
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো: রমজান আলী। সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলামের পরিচালনায় এতে বক্তব্য দেন জেলার নায়েবে আমির অধ্যক্ষ আজিজুল হক, সাবেক আমির মাওলানা তৈয়্যবুজ্জামান, আবদুস সালামসহ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের মনোনীত সংগঠনের এমপি প্রার্থীরা।
সম্মেলনে কিশোরগঞ্জ জেলার নারী-পুরুষ সাত শতাধিক সদস্য (রুকন) উপস্থিত ছিলেন।



