মানিকগঞ্জে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে মুখোশধারীদের আগুন

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি ফেসবুক পেজ থেকে স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেয়ার ভিডিও প্রকাশ করা হয়।

মো: শাহানুর ইসলাম, মানিকগঞ্জ

Location :

Manikganj
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মানিকগঞ্জের জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মানিকগঞ্জের জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ |নয়া দিগন্ত

মানিকগঞ্জে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ। আগুন দিয়ে ভিডিও করে নিজেরাই তা ফেসবুক পেজ থেকে প্রচার করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

শহরের মানড়া এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে স্থাপিত জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে রোববার (৩০ নভেম্বর) গভীর রাতে অগ্নিসংযোগ করে মুখঢাকা কয়েক ব্যক্তি। এতে স্মৃতিস্তম্ভের কিছু অংশ পুড়ে কালো হয়ে যায়।

জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা বিষয়টিকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রবিরোধী নাশকতাকারীদের অতি দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। এছাড়া নির্জন স্থান থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ স্থানান্তরের দাবি জানান রাজনৈতিক নেতারা।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি ফেসবুক পেজ থেকে স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেয়ার ভিডিও প্রকাশ করা হয়। আগুন দিয়ে নিজেরাই ভিডিও করে তা প্রচার করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পেজে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবিসহ নিষিদ্ধ কার্যক্রম সংগঠনটির প্রচারণামূলক পোস্ট দেখা গেছে। পোস্টে তাদের নেতা-কর্মীরা এ কাজকে বাহবা দিয়ে মন্তব্য করে যাচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ‘রাতের অন্ধকারে একটি প্রাইভেটকার স্মৃতিস্তম্ভের সামনে এসে থামে। গাড়ি থেকে নামা দুই ব্যক্তি আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা দুটি টায়ারে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।’

এ ব্যাপারে জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা জানান, ‘এ সময়ে এসে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেয়া ও পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জনের উপর হামলা করাকে আমরা প্রশাসনের দুর্বলতা হিসেবে দেখছি। এখন শুধু জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে নয়, বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে।’

তারা বলেন, ‘আমরা দেখছি একদিকে তাদের নেতা-কর্মীদের জামিন দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন জায়গায় হামলা, মামলা, আগুনের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়টি আসলে পরিকল্পিত একটি ব্যাপার, এ বিষয়ে প্রশাসনের শক্ত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

এ প্রসঙ্গে জুলাই আন্দোলনের সমন্বয়কারী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সাধারণ সম্পাদক নাহিদ মনির বলেন, ‘অবশ্যই ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজনই এ অপকর্ম করেছে। পুলিশের আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তাদের প্রতি কোনো দুর্বলতা দেখালে সামনে আরো বড় ধরনের নাশকতা ঘটতে পারে।’

আরেক সমন্বয়কারী মো: আশিকুর রহমান আশিক বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আসল অপরাধীদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। অথচ জুলাই যোদ্ধাদের কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। মূলত এই আগুন শুধু একটা স্তম্ভের গায়ে দেয়া হয়নি, বরং এটা জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে পুড়িয়ে দেয়া ও বিপ্লবের আদর্শকে ধ্বংস করার নীল নকশা। স্কুলবাসে আগুন দিয়ে ও বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা দোষী ও অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

জেলা জামায়াতের আমির হাফেজ মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশবিরোধী ফ্যাসিস্টদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। বর্তমানে যেখানে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে তা অরক্ষিত ও নির্জন স্থান। স্মৃতিস্তম্ভ শহরের প্রাণকেন্দ্রে কোনো সুবিধামতো স্থানে পুনঃস্থাপন করা হোক।’

জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম নূরতাজ আলম বাহার বলেন, ‘এ সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি মো: কামাল হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে আগুন লাগানোর সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

এদিকে, গত কিছুদিন আগে মহান আল্লাহকে কটূক্তিকারী বাউল শিল্পী আবুল বয়াতির ফাঁসির দাবিতে তৌহিদী জনতার মিছিল ও তার মুক্তির দাবিতে আগত বাউল ভক্তদের মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলাম আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) মানিকগঞ্জে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।

অপরদিকে, মানিকগঞ্জ ডেরা রিসোর্টের বিরুদ্ধে বাউল শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা দেয়া ও সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ডেরা রিসোর্টের ম্যানেজার মো: ফারুক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা আমরা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

জেলা হেফাজতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ডেরার বিষয়ে এ ধরনের কোনো কথা আমরা জানি না। আমরা মহান আল্লাহর নামে কটূকথার বিচার দাবি করেছি।’

এদিকে, মাওলানা মামুনুল হক, এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীসহ আলেম সমাজের অনেকেই মানিকগঞ্জে আসার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, বাউলদের পক্ষে ফরহাদ মজহারসহ বাউলভক্ত অনেকেই মানিকগঞ্জে এসে সমাবেশ করার কথা বলেছেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘মানিকগঞ্জ একটি শান্তিপূর্ণ জেলা। সবার সহযোগিতায় আমরা অবশ্যই এ শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখবো।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম বলেন, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’