ফরিদপুর প্রতিনিধি ও বোয়ালমারী সংবাদদাতা
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি দু’টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো: আবু জাফর (৮০) ও মানবতাবিরোধী মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু (৭৫) ছাড়াও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুকে আসামি করা হয়েছে।
পৃথক দু’টি মামলায় ২২৬ জনের নাম উল্লেখ করে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দসহ আরো প্রায় সাড়ে ৬ শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব মামলায় কাউকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মাহামুদুল হাসান মামলার বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থক মজিবুর রহমান বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৮৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে।
অপর মামলাটি দায়ের করেন উপজেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সভাপতি এবং খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম। এ মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুকে প্রধান আসামি করে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও শাহ মো: আবু জাফরকে। এছাড়া এ মামলায় তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে সালথা উপজেলার খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বাচ্চুকে। মামলায় তাকে হুকুমদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
একটি মামলার বাদি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ৭ নভেম্বর আমাদের বিকেলের কর্মসূচির আয়োজন করা হয় এবং ঝুনু মিয়ার কর্মসূচি ছিল সকালে। কিন্তু আমাদের কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা বিকেলে আয়োজন করে পরিকল্পিতভাবে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করে। যার পেছনে উস্কানি দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মো: আবু জাফর এবং আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু সাহেবের ছেলের নেতৃত্বে খারদিয়া গ্রাম থেকে অস্ত্র নিয়ে লোকজন এসেছিল। তবে অপর মামলার বাদি মজিবুর রহমানের বক্তব্য জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দীন মিয়া ঝুনু। সম্প্রতি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘোষিত তালিকায় এ আসনে কাউকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় আধিপত্য বিস্তারে এ দুই নেতার সমর্থকদের বিরোধ এখনো তুঙ্গে।
এরই মাঝে গত শুক্রবার ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন উপলক্ষে কর্মসূচিকে ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় উপজেলা বিএনপির একাংশের অস্থায়ী কার্যালয়ে ভাঙচুরসহ ১৫টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক গাড়ি উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এছাড়া কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষের পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনায় উপজেলা যুবদলের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মিনহাজুর রহমান লিপনসহ উভয়পক্ষের অন্ততপক্ষে অর্ধশত কর্মী সমর্থকেরা আহত হন।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মাহামুদুল হাসান বলেন, শনিবার পৃথক দুটি অভিযোগ করা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাতে পেনালকোড ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা দুটি রুজু হয়েছে। এখনো কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, এ সংঘর্ষে আহতদের দেখতে যান সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর এবং জামায়াতে ইসলামী বোয়ালমারী উপজেলা শাখার আমির হাফেজ বেলাল হোসাইন ও পৌর শাখার আমির মাওলানা সৈয়দ নিয়ামুল হাসানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া রোববার বিকেলে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি যুবদল নেতা মিনহাজুর রহমান লিপনকে দেখতে যান যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু।



