বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে হাতিয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ পুরোপুরি ভেঙে না গেলেও কয়েকটি এলাকায় এক-তৃতীয়াংশ বাঁধ ভেঙে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে স্বাভাবিক জোয়ারেও ভেঙে যেতে পারে বাকি অংশ। তাই দ্রুততম সময়ে মেরামত না করলে ক্ষতির মুখে পড়বে প্রায় বিশ হাজার পরিবার।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নিম্নচাপের ফলে স্বাভাবিকের তুলনায় তিন থেকে চার ফুট উচ্চতায় জোয়ার হয়। প্রচণ্ড ঝড়ো বৃষ্টি ও ধমকা বাতাসে পূর্ব দিক থেকে তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার জোয়ারে চরঈশ্বর ইউনিয়নের নলচিরা ঘাট থেকে বাংলা বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় অর্ধেকাংশ ভাঙন দেখা দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে গত বছর চার কিলোমিটার এই বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়। ফলে ঝড় জলোচ্ছ্বাস, জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পায় চরঈশ্বর ইউনিয়নের তালুকদার গ্রাম, বাদশা মিয়া হাজি গ্রাম, ৭ নম্বর গ্রাম, হামিদুল্লাহ গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার। বেড়িবাঁধে এসব গ্রামে বেড়েছে ফসলি জমি, মাছের প্রজেক্ট ও পুকুর। কিন্তু প্রচণ্ড জোয়ারে বেড়িবাঁধটির প্রায় দু’কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ।
চরঈশ্বর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘বেড়িবাঁধের বাইরে জোয়ারে বসতঘর ভেঙে নিয়ে যায়। আমাদের এখন দেখার কেউ নাই। সহযোগিতা করার কেউ নাই। কীভাবে ঘর-দুয়ার মেরামত করব, কার কাছে যাব, আমাদের পাশে কেউ নাই।’
একই এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ জোয়ারের আঘাতে বেশিরভাগ অংশ ভেঙে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় এক ফুট বা তার চেয়ে কম অবশিষ্ট আছে। ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ জরুরিভাবে মেরামত করা দরকার। তা না হলে হাজার হাজার বসতি জোয়ারে ভেসে যাবে। ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা রাসেল বলেন, ‘বাঁধের বিভিন্ন অংশে যে পরিমাণ ভেঙেছে স্বাভাবিক জোয়ারে সম্পূর্ণভাবে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামনে বর্ষা মৌসুম, এ সময় সাগর আরো বেশি উত্তাল থাকবে, জোয়ারের উচ্চতাও বাড়বে অনেক বেশি। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি মেরামত না করলে চরঈশ্বর ইউনিয়নের বেশির ভাগ অংশই সাগরে বিলীন হয়ে যাবে।’
এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আলাউদ্দিন জানান, ‘হাতিয়ায় জোয়ারে কয়েকটি ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চরঈশ্বর, নলচিরা, সুখচর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এসব ইউনিয়নে নদীর তীরে থাকা বেড়িবাঁধ জোয়ারের পানিতে ধসে পড়েছে। এছাড়া আমরা নিঝুমদ্বীপসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বাঁধের বাইরে বসবাস করা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তালিকাভুক্তির কাজ করছি। ইতোমধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বেড়িবাঁধ মেরামতসহ ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।’