চৌগাছায় বেশি দামে সার ও নকল কীটনাশক বিক্রির অভিযোগ, বিপাকে কৃষকরা

বর্তমানে সারের কোনো সঙ্কট নেই। উপজেলা সার ও বীজ মনিটারিং কমিটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে গোপনে বিভিন্ন ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী বেশি দামে সার ও নকল কীটনাশক বিক্রি করছে প্রমাণ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)

Location :

Jashore
সার ব্যবস্থাপনা ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ব্যবসায়ীদের জরিমানা
সার ব্যবস্থাপনা ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ব্যবসায়ীদের জরিমানা |নয়া দিগন্ত

যশোরের চৌগাছায় আমন মৌসুমে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সার ডিলার ও ব্যবসায়ীরা সরকারি বিধি না মানায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, চৌগাছা পৌর শহরসহ উপজেলার মাশিলা, কাবিলপুর, আন্দুলিয়া, পুড়াপাড়া, চাঁদপাড়া, ফাঁসতলা, পাতিবিলা, কয়ারপাড়া, সিংহঝুলী, আড়পাড়া, খড়িঞ্চা, সলুয়া, ধুলীয়ানী, পাশাপোল, নারায়নপুর ও হাকিমপুর বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামের সাব-ডিলারদের দোকানগুলোতে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চাইতে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

যদিও স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিলারদের কাছ থেকে তাদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। তারপর শ্রমিক ও বহন খরচ ধরে দাম একটু বেশি পড়ছে।

খড়িঞ্চা গ্রামের কৃষক নুর ইসলাম জানান, ‘এ বছর তার ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান রয়েছে। ক্ষেতে দেয়ার জন্য খড়িঞ্চা বাজারের ভরত হালদারের দোকান থেকে তিনি প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার ১ হাজার ৫৫০ টাকা দরে কিনেছেন। যার সরকারি দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা। টিএসপি প্রতি বস্তা সরকারি মূল্য ১ হাজার ৩৫০ টাকা হলেও ২ হাজার ১৫০ টাকা বস্তা কিনতে হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সারের কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে বেশি দামে কিনতে কৃষকদের এক প্রকার বাধ্য করছেন।‘

বড়খানপুর গ্রামের কৃষক মুজাহিদ হোসেন ও মির্জা আলী বলেন, ‘বাজারে টিএসপি ও ইউরিয়া সারের কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।’

সদর ইউনিয়নের কয়ারপাড়া গ্রামের কৃষক নাজিম উদ্দীন জানান, ‘এ বছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে আমন ধান করেছেন। তাকে সার বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। সরকার ডিএপি ১ হাজার ৫০ টাকা ও এমওপি সার ১ হাজার টাকা দাম নির্ধারণ করলেও তা সেই দামে পাচ্ছেন না কৃষকরা। অন্যদিকে বিভিন্ন মোড়কে বাহারী রঙের প্যাকেটে নকল কীটনাশকে বাজার ভরে গেছে। সার ডিলার ও ব্যবসায়ীরা সরকারি বিধি না মানায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।’

সাব-ডিলারদের অভিযোগ বিসিআইসি ডিলাররা অতিরিক্ত দাম নিয়ে সার বিক্রি করছে সাব-ডিলারদের কাছে। তবে তারা মেমোতে সরকারি মূল্য লিখছে। এ কারণে সাব-ডিলাররা অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অতিরিক্ত মূল্যে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি সার বিক্রির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রকৌশলী তাসমিন জাহানের নেতৃত্বে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন, প্রসিকিউটর ও অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীম হুসাইন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

এ সময় বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগে উপজেলার খড়িঞ্চানওদাপাড়া (দানবাক্স) মোড়ের সার ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান জিয়াকে সার ব্যবস্থাপনা ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ১০ হাজার টাকা, খড়িঞ্চা বাজারের ভরত কুমার হালদারকে ১০ হাজার টাকা, আব্দুল মজিদকে ২০ হাজার টাকা ও কমলাপুর মোড়ের আশাদুল ইসলামকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রকৌশলী তাসমিন জাহান বলেন, ‘উপজেলার সকল সান ডিলারদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি, মূল্য তালিকা টাঙানোসহ সার ব্যবস্থাপনা আইন মেনে চলতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেউ তা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে সার ব্যবস্থাপনা আইন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা উপজেলার বিভিন্ন সারের দোকানে অভিযান পরিচালনা করেছি। বর্তমানে সারের কোনো সঙ্কট নেই। উপজেলা সার ও বীজ মনিটারিং কমিটির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে গোপনে বিভিন্ন ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে। কোনো ব্যবসায়ী বেশি দামে সার ও নকল কীটনাশক বিক্রি করছে প্রমাণ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’