নিকলীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা আর নেই

কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের গুরুই গ্রামের মরহুম সোনাফর মিয়ার মেয়ে সখিনা বেগম। যুদ্ধের আগেই মারা যান স্বামী কিতাব আলী। তার স্বামীর বাড়ি একই এলাকায়। তার কোনো সন্তান নেই বলে জানা গেছে।

আলি জামশেদ, নিকলী (কিশোরগঞ্জ)

Location :

Kishoreganj
নিকলীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা আর নেই
নিকলীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা আর নেই |নয়া দিগন্ত

মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের সাথে রণাঙ্গনে লড়াই করে সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দেশের অনেক নারী। তাদের অন্যতম নিকলীর সখিনা বেগম। যুদ্ধে দা দিয়ে কুপিয়ে পাঁচ রাজাকারকে হত্যা করেন এ সাহসী নারী। তার সাহসিকতার কথা জীবিত মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয়দের মুখে মুখে। ৯২ বছর বয়সে এসে মৃত্যুর কাছে হার মেনে নেন এ যোদ্ধা।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত নিকলী উপজেলার গুরুই ইউনিয়নের গুরুই গ্রামের মরহুম সোনাফর মিয়ার মেয়ে সখিনা বেগম। যুদ্ধের আগেই মারা যান স্বামী কিতাব আলী। তার স্বামীর বাড়ি একই এলাকায়। তার কোনো সন্তান নেই বলে জানা গেছে।

মৃত্যুর আগে সখিনা বেগম নিকলীর সীমান্তবর্তী বাজিতপুর উপজেলার হিলোচিয়ার বড়মাইপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। সেখানে তাকে দেখভাল করতেন ভাগ্নি ফাইরুন্নেছা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় সখিনা গুরুই এলাকায় বসু বাহিনীর নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রাঁধুনির কাজ করতেন। কাজের ফাঁকে রাজাকারদের গতিবিধির বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে জানাতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। নিকলী উপজেলাকে মুক্ত করার সময় এ নারী তথ্য সংগ্রহে গুরুত্বের সাথে সাহসী ভূমিকা রাখেন। এছাড়া নানাভাবে সহায়তা করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

আরো জানা যায়, একপর্যায়ে সখিনা পাক সেনাদের হাতে ধরা পড়ে যান। পরে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়েও আসেন তিনি। ফিরে আসার সময় সেখান থেকে একটি ধারালো দা নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে সেই দা দিয়েই নিকলীর পাঁচ রাজাকারকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। পাক সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের হাতে মুক্তিযুদ্ধে মৃত্যু হয় তার ভাগ্নে মতিউর রহমানের। স্বজন হারানোর ব্যথা ও নির্যাতনের হৃদয়বিদারক স্মৃতি বুকে ধারণ করে প্রতিশোধে নেমে পড়েন এ নারী।

এদিকে হত্যায় ব্যবহৃত তার দা বর্তমানে ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে বলে জানা গেছে। ওই দায়ের নামফলকে উল্লেখ রয়েছে সখিনা বেগমের নাম।

জীবদ্দশায় স্বজনদের কাছে রেখে যাওয়া আকুতিতে গুরই (নিজ) এলাকার সামাজিক কবরস্থানে আসর নামাজের পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় এ যোদ্ধাকে।