আড়াই শ’ গুলি সঙ্গী করে দিন কাটছে আবু রায়হানের

ভাবিনি আমি দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে স্বৈরাচারের পতন দেখবো। মনে হয়েছিল, ওই দিনই ছিল আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা

Location :

Dowarabazar
আবু রায়হান
আবু রায়হান |নয়া দিগন্ত

গত বছরের ১৯ জুলাই সমগ্র দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ছাত্র-আন্দোলনে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিলরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে আহত হন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের কৃষক পরিবারের সন্তান মো: আবু রায়হান।

পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার একপর্যায়ে তার দু’পায়ে, হাতে ও কোমড়ে বিঁধে ২৫০টি গুলি। এ বছরের ১৯ জুলাইয়ে তার গুলিবিদ্ধের এক বছর, এখনো শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন ২৫০টি গুলির স্প্লিন্টার।

সিলেটের সৎপুর দারুল হাদিস কামিল মাদরাসা ও সিলেটের এমসি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হান। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের বীরেন্দ্রনগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক বাবুল মিয়ার ছেলে।

আবু রায়হান জানান, ‘শহরে লেখাপড়ার সুবাদে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন আবু রায়হান। ঘটনার দিন (১৯ জুলাই) বিকেলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে যেতে অনেকের সাহায্য চেয়েছিলেন। তবে বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে কেউ এগিয়ে আসেনি। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে নিজেই হাসপাতালের দিকে ছুটে যেতে থাকলে সামনে এগুতেই তার দুইজন সহপাঠী দেখতে পেয়ে রিকশায় করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, তার শরীরে আড়াই শ’-এরও অধিক গুলি রয়েছে। ওই দিন রাতে প্রথম অস্ত্রোপচারে তার শরীর থেকে পাঁচটি গুলি বের করা হয়। একদিন হাসপাতালে অবস্থান নেয়ার পরের দিন চিকিৎসকদের পরামর্শে বাড়িতে চলে আসেন। এরপর ডিসেম্বরে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (CMH) ভর্তি হন। ১৯ ডিসেম্বর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নেন। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সেখানে চিকিৎসকরা জানায়, শরীরে থাকা গুলিগুলো বের করা যাবে না। যদি বের করার চেষ্টা করা হয় তাহলে সমস্যা হতে পারে, জীবন নিয়ে হুমকিতে পরতে পারেন। তাই আপতত গুলিগুলো বের না করার পরামর্শ দেন। এছাড়াও চিকিৎসকরা জানায়, এসব গুলির প্রভাব বৃদ্ধ বয়সে পড়বে।

আবু রায়হান নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘গুলিবৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে শীররটা যেন একদম নিস্তেজ হয়ে গেছিল। ভাবিনি আমি দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে স্বৈরাচারের পতন দেখবো। মনে হয়েছিল, ওই দিনই ছিল আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত। শরীরে খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয়েছে, পা নিয়ে হাটতে পাচ্ছিলাম না। হাত-পা ও কোমড়ে ২৫০টির ও বেশি গুলি রয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, এটা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে। মাঝে মাঝেই প্রচন্ড ব্যথা হয়। তখন চুপচাপ, নিরিবিলি জায়গায় থাকি।’

আহত হওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন তিনি। তবে তার মতে, আহতরা কিছুটা সহযোগিতা পেলেও অনেকেই রয়েছেন চিকিৎসার অবহেলায়।

আবু রায়হান বলেন, ‘অনেকেই বিনা চিকিৎসায় দিন কাটাচ্ছেন। সরকার বা আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের পক্ষ থেকে তাদের চিকিৎসার জন্য ভালো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, আহতদের খুঁজে বের করে যেন সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।’ তাদেরকে বেঁচে থাকতে সাহস দেয়া হয়।

১৯ জুলাই দিনটিকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে আবু রায়হান ও তার পরিবারকে। শরীরে গুলির ভারে অনিশ্চিত আগামী। দিন কাটে ভবিষ্যৎ চিন্তা নিয়ে।