১০ দিনে ৩ খুন

রায়পুরায় বিরোধ মেটাতে গিয়ে শ্বশুরবাড়িতে গুলিতে প্রবাসী নিহত

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষার দড়িগাঁও ছক্কার বাড়ির মোড় গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

এস এম শরীফ মিয়া, রায়পুরা (নরসিংদী)

নরসিংদীর রায়পুরায় বিবদমান দুই গ্রুপের বিরোধ মেটাতে গিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের গুলিতে নিহত হয়েছেন মামুন মিয়া (২৫) নামে এক প্রবাসী। এসময় তার বাবাসহ আরো ১০ জন আহত হয়েছে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষার দড়িগাঁও ছক্কার বাড়ির মোড় গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত মামুন মিয়া দড়িগাঁও গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে। তিনি কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। তিনি ১৫ দিন আগে ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন বলে জানান তার বোন সোমা আক্তার।

পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই নিলক্ষা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শহিদ মিয়া গ্রুপ ও ফেলু মিয়া গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। শহিদ মিয়া গ্রুপে নেতৃত্ব দেন নাজিম উদ্দিন মেম্বার এবং ফেলু মিয়া গ্রুপে নেতৃত্ব দেন জবা মিয়া। আর নিহত মামুন ছিলেন নাজিম উদ্দিন গ্রুপের এবং অপর গ্রুপ জবা মিয়ার ভাতিজির জামাই। সে সুবাদে মামুন দুই গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা করতে তার শ্বশুরবাড়ি গেলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সেখানে তার বাবা আউয়াল মিয়াও উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মামুনকে গুলি করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে মামুনের বাবা আউয়ালসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়।

পরে আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মামুনকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় মামুনের বাবা আউয়াল মিয়া (৫৫) এবং পরশ মিয়া নামে আরো দু’জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্য আহতরা পুলিশী গ্রেফতার এড়াতে গোপনে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

নিহত মামুনের বোন সোমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘১৫ দিন আগে পাঁচ মাসের ছুটি নিয়ে কুয়েত থেকে দেশে ফিরেন আমার ভাই মামুন। আমাদের নিলক্ষা দড়িগাঁও ও দড়িগাঁও ফেলুর বাড়ির মধ্যে আগে থেকেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। আর সে বিরোধ মীমাংসার জন্যই তার শ্বশুরবাড়ি দড়িগাঁও ছক্কার বাড়িতে যান। সেখানে আমার ভাইয়ের আপন শ্যালক এনামুল, সোহাগ ও শ্বশুর ইসব ও চাচাশ্বশুর জবা মিয়া আমার ভাই ও বাবাকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে। এতে আমার ভাই নিহত হন এবং আমার বাবা ঢাকা মেডিক্যালে মৃত্যুর মুখোমুখি। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

এব্যাপারে জবা মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদা গুলশানা কবির বলেন, ‘নিলক্ষার সংঘর্ষের ঘটনায় বাবা ও ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে এলে ছেলেকে মৃত অবস্থায় পাই। বাবার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত মামুনের পেটে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি, আঘাতের ধরন দেখে গুলি মনে হচ্ছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।’

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, ‘দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় একজন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। এঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুতই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

এর আগে গত ২৯ নভেম্বর রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের সংগীতা-আমিরগঞ্জ সড়কের শাহাদাৎ হোসেন (১৪) নামে এক মাদরাসাছাত্রের গলাকাটা লাশ এবং গত ২ ডিসেম্বর একই উপজেলার বাঁশগাড়ীতে প্রাণতোষ সরকার (৪২) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের সংগীতা-আমিরগঞ্জ সড়কের বদরপুর এলাকার সড়কের পাশ থেকে শাহাদাৎ হোসেনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবার ও স্থানীয়দের ধারণা দুর্বৃত্তরা ব্যটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে শাহাদাৎকে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে সংগীতা-আমিরগঞ্জ সড়কের বদরপুর এলাকায় সড়কের পাশে ফেলে রেখে গেছে।

গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) একই উপজেলার বাঁশগাড়ীতে প্রাণতোষ সরকার (৪২) নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পরিবার জানায়, মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন প্রাণতোষ সরকার। এসময় প্রাণতোষের সাথে কথা বলার জন্য দুইজন লোক তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তারা বাঁশগাড়ী দিঘলিয়াকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রাণতোষকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।