বেদেদের কাছে বন বিভাগের জমি বিক্রির অভিযোগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

সংরক্ষিত সামাজিক বনায়ন করা বন বিভাগের প্রায় দেড় একর জমি বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের নিয়ে এসে ওই এলাকার স্থানীয় ভোটার বানাচ্ছেন বলে জানা গেছে

মুহাম্মদুল্লাহ, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

Location :

Tangail
নয়া দিগন্ত

টাঙ্গাইল সখীপুরের কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জামাল মিয়ার বিরুদ্ধে সংরক্ষিত সামাজিক বনায়ন করা বন বিভাগের প্রায় দেড় একর জমি বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের নিয়ে এসে ওই এলাকার স্থানীয় ভোটার বানাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কালিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড মৌলভীবাজার উত্তরপাড়া টাঙ্গাইলাচালার প্রায় দেড় একর জমি প্রতি শতাংশ মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে বেদে সম্প্রদায়ের ৪০টি পরিবারের কাছে বিক্রি করেছেন চেয়ারম্যান জামাল মিয়া। বেদে সম্প্রদায় ছাড়াও অন্য উপজেলার লোকদের কাছেও তিনি বনের জমি বিক্রি করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে এবং তৎকালীন বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এসব জমি বিক্রি করেন জামাল। এক্ষেত্রে বিক্রির প্রমাণ সরূপ বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের শুধু চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি কাগজ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই সম্প্রদায়ের লোকেরা।

এছাড়া মো: মোস্তফা (২৭), আরফিন (২১), হাসি (৪০), আরিফা (২৬) মো: ডালিম (৩০), মেঘ মালা আক্তার (৩৩), মো: চঞ্চল (৫০), রবিউল ইসলাম (৫০), আফানুল্লাহ (৬০), ফকির চান (৬০), ও আলেপসহ (৪০) কমপক্ষে ৪০ জন বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের গত কয়েক বছরে টাকার বিনিময়ে সংরক্ষিত বনায়নের জমি দিয়ে তাদের ওই এলাকার ভোটার বানিয়েছেন তিনি। এসব কাজ চেয়ারম্যান জামাল মিয়া শুধু টাকার জন্যই করছেন নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ রয়েছে তা সঠিকভাবে বলতে পারছে না কেউই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা বনের পশুপাখিই শুধু হত্যা করছেন না, পরিবেশ-প্রকৃতির ক্ষতি করে এমন কাজও প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় মাঝেমধ্যেই চুরিসহ নানা ধরনের অপরাধ সঙ্ঘটিত হচ্ছে। এসবের সাথে বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা জড়িত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

বেদে সম্প্রদায়ের মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান, ‘আমরা আসার আগে এখানে সামাজিক বনায়নের প্লট ছিল। জামাল চেয়ারম্যান আমাদের কাছে এ জমি বিক্রি করেছেন। তিনি আমাদের এ এলাকার স্থানীয় ভোটার বানিয়েছেন। আমাদের কেউ কেউ সরকারি বিভিন্ন ভাতাও পাচ্ছেন। আমরা যতদিন বেঁচে আছি এ চেয়ারম্যানকেই ভোট দেব।’

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে মোবাইলফোনে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান জামাল মিয়া বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এগুলোর সাথে জড়িত নই। এ কথা বলে তিনি কল কেটে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।’

বিট কর্মকর্তা রুমিউজ্জামান বলেন, ‘জামাল চেয়ারম্যান ৮ বছর আগে প্রায় দেড় একর সরকারি জমি জবরদখল করেন। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। যেকোনো সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

বহেরাতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা এমরান আলী বলেন, ‘আমি এখানে জয়েন করেছি সাত মাস আগে। শুনেছি জামাল চেয়ারম্যান সামাজিক বনায়নের জমি বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে বিক্রি করেছেন। আমরা কয়েক বার উচ্ছেদ অভিযান করতে চেয়েও পারিনি। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেন। সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বনের জমি উদ্ধার করব।’

অন্য জেলার বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা সখীপুরে ভোটার হতে পারেন কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক সুতরাং চেয়ারম্যান যদি তাদের জন্ম সনদ দিয়ে থাকে তাহলে তারা ওই এলাকার ভোটার হতে পারেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।’

উপজেলা বনায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনি বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে কোনো কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেব।’