কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা ও নরসিংদী জেলার মনোহরদীর ব্রহ্মপুত্র নদে অবৈধভাবে রাতের আঁধারে চলছে বালু লোপাটের মহোৎসব। এতে চরম হুমকিতে রয়েছে নদের দুই পাড়ের বসতভিটা ও ফসলি জমি। প্রশাসনের তদারকি ও নজরদারির অভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এ বালুখেকোরা।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে এ ঘটনায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করেছে কটিয়াদীর জালালপুর ইউনিয়নের চরপুক্ষিয়া গ্রামের নদ পাড়ের বাসিন্দারা।
বিক্ষোভে এলাকাবাসী রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একইসাথে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কথা জানান তারা।
সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জালালপুর দক্ষিণ চরপুক্ষিয়া অংশে ও পাশের মনোহরদীর চরমান্দালিয়া ইউনিয়নের সীমান্তে চার থেকে পাঁচটি বড় বাল্কহেড নৌকা দিয়ে কখনো দিনে আবার কখনো গভীর রাতে বালু তোলা হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে সুযোগ বুঝে এ কাজ করছে একটি চক্র। একইসাথে পাশের খিদিরপুর, বেলাবো বিন্নাবাইদ অংশেও প্রবেশ করে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েক দিন আগে মৃধা বাড়ি খেয়াঘাটে দিনের বেলা কয়েকটি নৌকা বালু তোলা শুরু করলে স্থানীয়রা বাঁধা দিয়ে আটকে রাখে। পরে স্থানীয় কয়েকজন (চক্রের সদস্য) হুমকি দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
তাদের এমন কর্মকাণ্ডে প্রশাসন খোঁজ নিয়ে আটক শুরু করলেই বালু লোপাট বন্ধ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত সরকারের সময় তোলা নদ পাড়ের কটিয়াদী অংশে দুটি ও মনোহরদী অংশে তিনটি অবৈধ বালুর স্তূপ রয়েছে। এগুলোতে কয়েক কোটি টাকার বালু জমা রয়েছে। সরকার পতনের পর স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকটি চক্র তাদের অবস্থান পাল্টে দুই এলাকার প্রভাবশালী দলের সুবিধাবাদী লোকজনের ছত্রছায়ায় নতুন করে বালু তোলা এবং আগের বালুর স্তূপ লোপাটের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে বালুর স্তূপগুলো সরিয়ে না নেয়া হলে তা লুটে নেয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ওই স্তূপগুলো বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে সরকার থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিনে নেয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে আরেকটি চক্র।
জালালপুর উত্তর চরপুক্ষিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম, গোলাপ, মাসুদ মৃধাসহ অনেকে বলেন, ‘নৌকায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু তোলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাত যখন গভীর হয় তখন আমরা ড্রেজারের শব্দ পাই। পরে ফজরের সময় তারা সটকে পড়েন। এভাবে বালু তোলার কারণে বসতবাড়ি, রাস্তা ও ফসলি জমি নদের ভাঙনে পড়তে পারে। এনিয়ে প্রতি রাতে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে আমাদের। এদিকে প্রতিবাদ করলেই দেয়া হয় হুমকি-ধামকি।’
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আপনার থেকে বিষয়টি জেনে অ্যাসিল্যান্ডকে অবগত করে তাৎক্ষণিক পাঠিয়েছি। কিন্তু দিনে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নজরদারি অব্যাহত থাকবে। অবৈধভাবে বালু তোলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থাকবে। এদিকে স্তূপ করা বালুর বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। এছাড়া অবৈধভাবে বালু নিতে আসা ব্যক্তিদের দেখা মাত্রই আমাদের অবগত করতে স্থানীয়দের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এ মুহাইমিন আল জিহান বলেন, ‘এভাবে অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়টি জানতাম না। খোঁজ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। নজরদারি বাড়ানো হবে।’
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার সকালে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানকে তার মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।