৫ আগস্ট বিজয়ের মুহূর্তেই পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়লেন বিমানের ইঞ্জিনিয়ার ওমর বিন নুরুল আবছার। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে উত্তরার জসিম উদ্দীন রোডে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান ওমর।
জুলাই বিপ্লবে শহীদ মো: ওমর বিন নুরুল আবছার বেঁচে থাকলে আজ তিনি বিমানের ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণসহ দেশের হয়ে কাজ করতেন। তার সে আশা পূরণের মাত্র তিন মাসের মাথায় বিজয় মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ওমর বিন নুরুল আবছার চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের আকুবদন্ডি গ্রামের প্রবাসী মো: নুরুল আবছার ও রুবি আকতারের ছেলে। শহীদ ওমর ছিলেন পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তিনি ২০ জানুয়ারি ২০০২ সালে মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইংরেজি কারিকুলামে পড়াশোনা করেন। তার স্বপ্ন ছিল বিমানের ইঞ্জিনিয়ার হবেন। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভর্তি হন এবং এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এরপর বিমানের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারে ভর্তি হন। শেষ মডিউলে পড়ছিলেন। শহীদ ওমরের ছোট ভাই মোহাম্মদ বিন নুরুল আবছার জানান, গ্রাজুয়েশন শেষ করতে তিন মাসের মত বাকি ছিল। পড়া শেষ হওয়ার আগেই বেশ কয়েকটি চাকরির অফার পেলেও তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাজপথে থেকে লড়াই করার সিদ্ধান্তে ছিল অটল।
এর আগে ১৮ জুলাই রাবার বুলেটে আহত হয়েছিল শহীদ ওমর। পরে ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে তিনি উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটালে মারা যান। শহীদ ওমরের ভাই জানান, দুপুর ১টার দিকে মায়ের সাথে মোবাইলে কথা বলেন, আমরা জানতে পারি সাড়ে ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ৬টার দিকে (ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী) ইন্তেকাল করেন।
ওমরকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিক্যালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। পরে রাস্তায় কয়েকজন ছেলে মিলে তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটালে নিয়ে যায় এবং সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান। পরিস্থিতির কারণে আমরা যেতে পারিনি, গাড়ি পাচ্ছিলাম না। পরে তার বন্ধুরা এবং সিনিয়ররা একটা ফ্রিজার গাড়ি করে তার লাশ পাঠিয়ে দেয়। তারপর ভোর ৪টার দিকে আমার ভাইয়ের লাশ বুঝে নেয়া হয়।
মায়ের বরাত দিয়ে তার ছোট ভাই মোহাম্মদ বিন নুরুল আবছার বলেন, তার স্বপ্ন ছিল অনেক। মায়ের ইচ্ছা ছিল সে ডাক্তার হবে। কিন্তু তার আগ্রহ ছিল বিমান নিয়ে জানাশোনার।
আমার ভাই কখনো রাজনীতি করতো না, একদিন পথে হেঁটে যাচ্ছিল তার পাশে একটা চাকরিজীবী বয়স্ক মানুষ ছিল, তিনি ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই সে মারা যায়। সে দৃশ্য আমার ভাই ভুলতে পারেনি তাই সে আন্দোলনে যোগ দেয়।
এদিকে ২৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর নিজ বাড়ির কবরস্থান থেকে দাফনের প্রায় ১১ মাস পরে আন্দোলনে শহীদ ইঞ্জিনিয়ার মো: ওমর বিন নুরুল আবছারের লাশ সুরতহাল এবং ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করে পরবর্তীতে সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে তার লাশ দাফন করা হয়। শহীদ মো: ওমর বিন নুরুল আবছারের পরিবার এখন ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় দিন পার করছেন।