২০ বছর পর লবণাক্ত জমিতে ধান চাষ, উচ্ছ্বসিত কৃষক

নদী থেকে বিলে লোনাপানি প্রবেশ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি ও মৎস্য অফিস এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় কৃষকরা আউশ ও আমন ধান চাষাবাদে সফল হয়েছেন।

ফরহাদ খান, নড়াইল

Location :

Narail
জমিতে আউশ ধান কাটছে কৃষকরা
জমিতে আউশ ধান কাটছে কৃষকরা |নয়া দিগন্ত

লবণাক্ত পানির প্রভাবে ২০ বছর ধরে অনাবাদি থাকা জমিগুলোতে আবার ধান চাষ হওয়ায় উচ্ছ্বসিত নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কৃষকরা। কৃষকদের উদ্যোগে বদলে গেল উপজেলার পিরোলী এলাকার ১২৫ একর জমির কৃষি ব্যবস্থা।

বিগত বছরগুলোতে প্রভাবশালীরা মাছের লোভে এলাকার জেলেদের সাথে নিয়ে ধানের মৌসুমে স্লুইসগেট খুলে রাখায় লবণাক্ত পানি ঢুকে বিল সয়লাব হয়ে যেত। ফলে আমন ও আউশ ধান চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়।

এ পরিস্থিতিতে গোলাম মোর্শেদ শেখ নামে পিরোলী গ্রামের এক সাংবাদিক কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে লবণাক্ত পানি বিলে প্রবেশ বন্ধে উদ্যোগ নেন।

প্রায় পাঁচ বছর আগে গোলাম মোর্শেদ শেখ কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুজ্জামান এবং তৎকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিভা মল্লিককে এ এলাকার ১২৫ একর জমি অনাবাদি থাকায় বিষয়টি অবগত করেন। ইউএনও এবং কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে নদী থেকে লবণাক্ত পানি বিলে প্রবেশ বন্ধে ব্যবস্থা নেন। এরপর পিরোলী বাজারের পাশে চিত্রা নদীর মোহনায় স্লুইচগেটটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

অন্যদিকে অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ও শুভরাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল হককে বিষয়টি অবগত করা হলে তারাও অনুপ্রাণিত হয়ে তিনটি স্লুইসগেট বন্ধ করে দেন। এতে বিলে লবণাক্ত পানি ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়।

এর ফলে এ অঞ্চলের দুই শতাধিক কৃষক প্রায় ২০ বছর পর পিরোলী, নাউলি, আমতলা, গোপীনাথপুর ও ইছামতি বিলে আউশ এবং আমন ধান চাষাবাদের সুযোগ পান। পিরোলী ও সিদ্ধিপাশার চন্দ্রপুরবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ধরনের উদ্যোগ সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

কৃষক ইসরাইল শেখ পাঁচ একর জমিতে আউশ ধান চাষাবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ২০ বছর পর জমিতে ধান চাষাবাদ করতে পেরে খুশি হয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে।

কৃষক আফজাল শেখ, কিবরিয়া মোল্যা, সুরত ম্যোলা দুই একর জমিতে আমন ধান এবং খাজা মজুমদার পাঁচ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। তারা বলেন, নবগঙ্গা নদী থেকে লবণাক্ত পানি বিলে প্রবেশ করায় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী বিলসহ পাশের অভয়নগর (যশোর) উপজেলার সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের নাউলি বিল, আমতলা বিল এবং শুভরাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর, ইছামতি বিলে আউশ ও আমন ধান চাষাবাদ করা সম্ভব হতো না।

কৃষক অনিল সেন, মিঠুন সরদার, অতুল বিশ্বাসসহ অনেকে বলেন, নদী থেকে লোনা পানি বিলে ঢোকা বন্ধ হওয়ার পর এলাকায় মাইকিং করে ধান চাষাবাদে কৃষকদের অনুপ্রাণিত করা হয়। ফলে কৃষকরা তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছেন। আউশ ও আমন ধানের ভালো ফলন হওয়ায় আগামীতেও এই বিলে কৃষকরা চাষাবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুজ্জামান বলেন, কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পিরোলী অঞ্চলে নদী থেকে বিলে লোনাপানি প্রবেশ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন, কৃষি ও মৎস্য অফিস এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় কৃষকরা আউশ ও আমন ধান চাষাবাদে সফল হয়েছেন। কৃষকরা এর সুফল পেয়েছেন বলে আমরা আনন্দিত।