বেতাগীতে রোপা আমন চাষে ব্যস্ত কৃষক, চারা সঙ্কটে হতাশ প্রান্তিকরা

এই বছর অতিবৃষ্টির কারণে বীজ রোপণের শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি দিতে হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা।

বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা

Location :

Barguna
বেতাগীতে রোপা আমন চাষে ব্যস্ত কৃষক
বেতাগীতে রোপা আমন চাষে ব্যস্ত কৃষক |নয়া দিগন্ত

বরগুনার উপকূলীয় জনপদ বেতাগীতে মৌসুমী রোপা আমন ধান চাষাবাদ পুরোদমে শুরু হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকেরা জমিতে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে অনেক স্থানে ধানের চারা সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বেতাগী উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করে রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বৃষ্টির পানি কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হলেও অতিবৃষ্টির ফলে অনেক বীজতলা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রোপণের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফলে চারা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ করে জমি প্রস্তুত করছেন এবং বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

প্রাকৃতিক পানির কারণে সেচের প্রয়োজন না হলেও সার, কীটনাশক, ডিজেল ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা কাঙ্ক্ষিত লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। সারের কৃত্রিম সঙ্কট মোকাবিলার দাবি জানিয়েছেন তারা।

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্রি ধান ৭১, ৭৫, ৪৯, ১০৩ এবং দেশীয় জাতের ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা রোপা আমন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

স্থানীয় কৃষকেরা জানায়, গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণ শুরু হয়েছে। টানা বর্ষণে অনেক বীজতলা বিনষ্ট হয়েছে। এতে চারা সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। শস্যভাণ্ডার খ্যাত এ উপজেলায় কামলা সঙ্কটও দেখা দিয়েছে। শ্রমিক পাওয়া গেলেও দৈনিক মজুরি দিতে হচ্ছে ১০০০ থেকে ১,২০০ টাকা।

জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় সাড়ে ৬০০০ হেক্টর জমিতে বীজ বপণ করা হয়েছে। বর্তমানে হাটবাজারে ১ পণ (৮০ তার) ধানের চারা সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এককাঠি বীজের (২৬ কেজি) দাম ১৭ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। এতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন।

হোসনাবাদ জলিশা গ্রামের কৃষক বারেক হাওলাদার (৭২) বলেন, ‘আমন বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে বীজের দাম চড়া।’

বেতাগী সদর ইউনিয়নের ঝোপখালী গ্রামের কৃষক আব্দুস সোবাহান মৃধা (৬৮) বলেন, ‘এই বছর অতিবৃষ্টির কারণে বীজ রোপণের শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি দিতে হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কৃষিকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারো রোপা আমন চাষাবাদ শুরু হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতে কিছু বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে চারা সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তেমন নেই। চলতি মাসের শেষের দিকে চাষাবাদ শেষ হবে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।’