পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফ ওবায়দুল্লাহ পদত্যাগ করেছেন।
বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
তিনি লেখেন, ‘আমি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। বিভাগের স্বার্থে আমি এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। যারা আমাকে এ সময় সহযোগিতা করেছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
এ বিষয়ে কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক আরিফ ওবায়দুল্লাহ জানান, রুম বরাদ্দসংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনের আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বাংলা বিভাগসহ মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রতি অবহেলা এবং চেয়ারম্যান হিসেবে তার মতামতকে গুরুত্ব না দেয়াই তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে হঠাৎ করে ভিসি স্যার রুম বরাদ্দ বিষয়ে মিটিং ডাকেন। এর আগে আমাদের চিঠির মাধ্যমে ডিনদের দিয়ে রুমের চাহিদা চাওয়া হয়েছিল। তখন আমরা আমাদের চাহিদা জানাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে একাডেমিক ভবন-১ এর জন্য। আজকের মিটিংয়ে রুম বরাদ্দ হয়, তবে আমাদের চাওয়া অনুযায়ী ইউ-শেপ ভবন দেয়া হয়নি। আমরা বাংলা বিভাগসহ মানবিক অনুষদের প্রায় প্রতিটি বিভাগ দীর্ঘদিন ধরেই টিনশেড মহুয়া ভবনের অস্থায়ী শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিচ্ছি। আমরা বরাবরই একধরনের বঞ্চনার বা অবহেলার শিকার হয়ে আসছি। এবার আমাদের শিক্ষার্থীরা আশাবাদী ছিল, আমরা “ইউ-শেপ: (একাডেমিক ভবন-১) বিল্ডিংয়ে রুম বরাদ্দ পাব। কিন্তু আমাদের তা দেয়া হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন থাকার পরও আরো নতুন ভবন ইঞ্জিনিয়ারিংদের দেয়া হচ্ছে। অথচ মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জন্য কোনো ভবনই নেই। মিটিংয়ে আমি বিষয়টি উপস্থাপন করি, আরো প্রস্তাব রাখি—সেটা যদি না পারেন, তাহলে বিজ্ঞান ভবনের পঞ্চম তলায় যেহেতু আমাদের অফিস আছে, ওখানে একাডেমিক-১ এ না দিতে পারলে পুরো ৫ম তলায় আমাদের দিতে। কিন্তু তারা বলে, ‘না, এখন যা হয়ে গেছে, আর পরিবর্তন হবে না।’ আমি তারপরও তাদেরকে এটা নিয়ে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু তারা বলছে, ‘যা বলা হয়েছে, সেটাই চিঠি আকারে যাবে এবং এর বিরুদ্ধে কিছু করতে চাইলেই একশন নেয়া হবে।’ তখনই আমি মিটিং থেকে বের হয়ে চলে এসেছি। ভিসি স্যার বলেন, প্রয়োজনে বাংলা বিভাগের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি বসবেন। এর মানে হচ্ছে, চেয়ারম্যান হিসেবে আমার কথার কোনো গুরুত্ব নেই।
এই ঘটনায় শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অধ্যাপক আরিফ ওবায়দুল্লাহ। তিনি বলেন, প্রশাসনের দ্বারা শিক্ষকদের যে একটা মর্যাদা থাকা দরকার মিটিংয়ে, সেই জায়গাটা প্রশাসনের কেউই রক্ষা করেনি। এর আগের মিটিংয়েও তারা শিক্ষক ও চেয়ারম্যানদের সাথে নানা দুর্ব্যবহার করেছেন—প্রশাসনিক পদে যারা আছেন। একটা মিটিংয়ে ডেকে নিয়ে কথা তো বলতে দিতে হবে—ভালো বা মন্দ, পজিটিভ বা নেগেটিভ। কথা বলার সুযোগই যদি না থাকে, তাহলে সেখানে থেকে তো কোনো লাভ নেই। এবং উনি বলেছেন, আমি বিভাগের চেয়ারম্যান—ঠিক আছে, তবুও তিনি আমার বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে বসবেন। মানে, যেখানে আমি একটা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করছি, সেটা তিনি মানতে রাজি নন। ফলে চেয়ারম্যান হিসেবে এই পদে থাকা আর কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না।
এ বিষয়ে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মীর খালেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘উনার পদত্যাগের বিষয়ে আমি লিখিত কিছু পাইনি। উনার সাথে আমার দেখা হয়েছে, উনি আমাকে বললেন, “স্যার, আমি পদত্যাগ করেছি।” এতটুকুই আমি জানি। এখন উনি কেন, কী কারণে পদত্যাগ করেছেন, সেটা বলতে পারব না। লিখিত পেলে হয়তো বিস্তারিত জানা যাবে।’