বাঘা (রাজশাহী) সংবাদাতা ও লালপুর (নাটোর) সংবাদদাতা
মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় বাবা-মেয়ের দুই পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
সোমবার (১৯ মে) সকাল ৯টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বানিয়াপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন- নাটোরের লালপুর উপজেলার বেরিলাবাড়ী জামতলা গ্রামের প্রবাসী এজাহার আলীর ছেলে শান্ত ইসলাম (২৬), তার স্ত্রী জামিউন বেগম (২৪) ও মেয়ে তুরায়ফা ইয়াসমিন (৫)।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মকর্তা (ইএমও) ডা. শংকার কুমার বিশ্বাস জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শান্তর একটি পা এবং তার মেয়ে তুরাইয়ার একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখানে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশংকাজনক।
আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত তাদের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি আক্তার।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, মালয়েশিয়া প্রবাসী শান্ত ইসলাম ছুটিতে কিছু দিন আগেই দেশে ফিরেছেন। সকালে শান্ত তার স্ত্রী ও মেয়েকে মোটরসাইকেলে করে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে বানিয়াপাড়ায় পৌঁছলে ঢাকাগামী ‘সুপার সনি’ নামের যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এ সময় বাবা-মেয়ে বাসের নিচে চাপা পড়েন। এতে বাবা ও মেয়ের শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে শান্তর স্ত্রীও আহত হন।
ওসি আরো বলেন, এ ঘটনার পর বাসচালক ও হেলপার পালিয়েছেন। তবে বাসটি জব্দ করে থানায় নেয়া হয়েছে। বাসচালক ও হেলপারকে শনাক্ত এবং আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মামলা হবে।
আহতদের স্বজন লাখি খাতুন বলেন, দুর্ঘটনায় শান্ত ইসলাম ও তার শিশু কন্যার ডান পা হাঁটু থেকে বিছিন্ন হয়ে গেছে। শান্ত ইসলাম একজন কম্পিউটার ব্যবসায়ী। আর তার মেয়ে তুরায়ফা গ্রীন হ্যাভেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে নার্সারির শিক্ষার্থী। তার জামিউন বেগমের ডান হাত ও মাজার হাড় ভেঙে গেছে। তিনি বর্তমানে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহত শান্ত প্রতিদিনের মতো মোটরসাইকেলযোগে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এদিন তার স্ত্রী জামিউন বেগমকে ডাক্তার দেখানোর জন্য সাথে নিয়েছিলেন। তারা বানিয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা সুপার সনি বাসের সাথে তাদের মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজনই গুরুতর আহত হন। এ সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তাদের অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) প্রেরণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনাস্থল বানিয়াপাড়ায় আঞ্চলিক সড়কের কাছে আনোয়ার ভান্ডারীর ছেলে মাসুদ রানা ফুয়াদের ইটের স্তূপ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। মোটরসাইকেলের চালক শান্ত ইসলাম ইটের স্তূপের কারণে আগত বাসকে দেখতে না পাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা সড়কে রাখা ওই ইটের স্তূপের মালিক মাসুদ রানা ফুয়াদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।