লম্বা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রশাসনের তৎপরতা

৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে তিন জোড়া এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এক জোড়া ট্রেন চলবে।

গোলাম আজম খান, কক্সবাজার অফিস

Location :

Cox's Bazar
লম্বা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল
লম্বা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল |নয়া দিগন্ত

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শারদীয় দুর্গাপূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে ঘোষিত টানা ১২ দিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলমান ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা উপকূলীয় এই শহরে অবকাশ যাপন করতে আসছেন। ফলে সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের পর্যটন স্পটগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে দুর্গাপূজা উপলক্ষে যাত্রী চাহিদা পূরণে ঢাকা-কক্সবাজার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চার জোড়া ‘পূজা স্পেশাল’ ট্রেন চালু করেছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে তিন জোড়া এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এক জোড়া ট্রেন চলবে।

হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিকদের মতে, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে। শুক্রবার থেকে ভিড় আরো বেড়েছে।

হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত সব ধরনের আবাসিক প্রতিষ্ঠানে শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বেশিভাগ কক্ষে ৩৫ শতাংশ ছাড় দেয়া হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি শেষে এখনও পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষণীয়, যা পুরো সপ্তাহজুড়ে অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আগামী ১ ও ২ অক্টোবর শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুযোগ রয়েছে। চলতি মৌসুমের শুরুতেই আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, যা পর্যটন ব্যবসার জন্য ইতিবাচক। পর্যটকদের হয়রানি রোধে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা সৈকতসহ দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফের সৈকতেও পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে।

জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী মাহবুব আলম জানান, শুক্রবার সকাল থেকেই সৈকতের তিনটি পয়েন্টে পর্যটকে ঠাসা হয়ে উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে সুগন্ধা ও লাবণী সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটি শেষ হলেও সৈকতজুড়ে পর্যটকের ভিড়। বিভিন্ন বয়সের পর্যটক সাগরে গোসলে নেমে আনন্দে মেতে উঠেছেন। ঘোড়া, বীচবাইক ও ওয়াটারবাইকে চড়ে উপভোগ করছেন অবকাশ। পর্যটকদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা।

সি-সেইফ লাইফগার্ডের আঞ্চলিক কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, বর্তমানে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে এবং গুপ্তখাল তৈরি হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে লাইফগার্ডের নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে এবং সেখানে গোসলে না নামতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। পর্যটকদের যেন কোনো ভোগান্তিতে না পড়তে হয়, সে বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।

নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো: আ. মান্নান জানান, পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ রয়েছে। সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটন সেলের কর্মীরা তৎপর রয়েছেন।

পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশিভাগই সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন।

ফেনী থেকে আসা কলেজ শিক্ষক আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘বাচ্চাদের স্কুল ছুটি হওয়ায় বেড়াতে এসেছি। আমার কলেজও বন্ধ, তাই এবার দীর্ঘ সময়ের জন্য অবকাশ যাপন সম্ভব হচ্ছে।’

টাঙ্গাইল থেকে আসা সুমন আখন্দ স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে শনিবার সকালে কক্সবাজারে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের সৌন্দর্য অতুলনীয়। সমুদ্রের রূপ আমার সন্তানদের বিমোহিত করে। সুযোগ পেলে বছরে দু-একবার এখানে বেড়াতে আসি।’

পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবায় প্রশাসনের তৎপরতা এবং পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সতর্কতা কক্সবাজারে চলমান পর্যটন মৌসুমকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছে।