নাহিদ ইসলাম

কিশোরগঞ্জের ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিল

‘জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, নতুন দেশ গড়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এই লড়াই চলমান থাকবে।’

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

Location :

Kishoreganj
কিশোরগঞ্জে জুলাই পদযাত্রা সমাবেশে নাহিদ ইসলাম
কিশোরগঞ্জে জুলাই পদযাত্রা সমাবেশে নাহিদ ইসলাম |নয়া দিগন্ত

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এই কিশোরগঞ্জের মানুষ রাষ্ট্রপতি পেয়েছে, কিন্তু তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার পায়নি। এই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি আপনাদের বাংলাদেশকে, আমাদের বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিল। মানুষের মানবাধিকার, মানুষের গণতন্ত্র, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। এই কিশোরগঞ্জ থেকেই আপনারা সেই ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান তৈরি করেছিলেন।

শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে কিশোরগঞ্জে জুলাই পদযাত্রা সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা শহরের পুরানথানা এলাকার স্বাধীনতা চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানি, কিশোরগঞ্জের সদর এলাকাতেও স্কুল আছে কিন্তু শিক্ষক নেই, হাসপাতাল আছে কিন্তু ডাক্তার নাই, যুব সমাজ আছে কিন্তু কর্মসংস্থান নাই। অনেক বাজেট আছে কিন্তু রাস্তা নাই। রাষ্ট্রপতি আছে কিন্তু মানুষের উন্নয়ন নাই। আমরা এই কিশোরগঞ্জের চেহারা পাল্টে দিতে চাই।’

জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আবারো রাজপথে নামতে হয়েছে। যখন আমরা দেখেছি, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও মানুষের অধিকার আদায় হয়নি। আমরা যখন দেখতে পাচ্ছি, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও সমাজে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। আমাদের আবারো নামতে হয়েছে, যখন আমরা দেখেছি, রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে দুর্নীতিকে চিরতরে বিলুপ্ত করা যায়নি। আমরা বলেছিলাম, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যেই পুরনো ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা রয়েছে, শেখ হাসিনার সংবিধানসহ শেখ হাসিনার যে সরকার ব্যবস্থা ছিল, এই সকল নিয়ম বাদ দিয়ে নতুন রাষ্ট্র, নতুন সরকার তৈরি করতে হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় আমরা নতুন সরকার পেলেও নতুন দেশ এখনো পাইনি। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, নতুন দেশ গড়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এই লড়াই চলমান থাকবে।’

নাহিদ ইসলাম কিশোরগঞ্জ জেলাবাসীদের উন্নয়ন বঞ্চনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ হাওর বিধৌত এলাকা। হাওর এলাকার মানুষকে সংগ্রাম করে, কষ্ট করে জীবনযাপন করতে হয়। এই কিশোরগঞ্জে সুপেয় পানির সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই কিশোরগঞ্জের কৃষকদেরকে সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে সার সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। কৃষকরা তাদের কৃষিকাজ ঠিকমতো করতে পারছে না। তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। হাওর এলাকা থেকে একটা শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারে না, চিকিৎসার জন্য সুব্যবস্থা পায় না। আমরা এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, যেখানে প্রত্যেকটা মানুষের কাছে নাগরিক সুবিধা পৌঁছাবে। প্রত্যেকটা মানুষ নাগরিকের মর্যাদা পাবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল তরুণদের নেতৃত্বে। এই তরুণদের ওপর আস্থা রেখে বাংলাদেশের মানুষ নেমে এসেছিল। আমরা আবারো বলছি, এই তরুণদের ওপর আস্থা রেখে আপনারা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদান করুন। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদেরকে নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি বাংলাদেশের ৫৪ বছরে যেই দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা, যেই মাফিয়াতান্ত্রিক লুটেরা রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেই রাষ্ট্রের পরিবর্তন ঘটাবে।’

নাহিদ ইসলাম যোগ করেন, ‘তরুণরা রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি, দেশের চালিকাশক্তি। এই তরুণদেরকে যদি গণঅভ্যুত্থানের পরেও কাজে লাগাতে না পারি, এই তারুণ্যের শক্তিকে যদি দেশ গঠনে কাজে লাগানো না যায়, বাংলাদেশকে আর কখনো গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। আমরা তরুণরা তারুণ্যের সেই শক্তিতে বিশ্বাসী, আমরা কিশোরগঞ্জের শক্তিতে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি, কিশোরগঞ্জ জাতীয় নাগরিক পার্টির শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হবে।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমীন, যুগ্ম সদস্য সচিব আহনাফ সাঈদ খান, দক্ষিণাঞ্চল সংগঠক আকরাম হোসেন রাজ, উত্তরাঞ্চল সংগঠক খায়রুল কবির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব ডা: তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রমুখসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রাত ৮টার দিকে কিশোরগঞ্জ স্টেডিয়াম থেকে পদযাত্রা করে নেতারা পুরানথানা এলাকার সমাবেশস্থলে যান। এনসিপির এই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে প্রশাসনের পক্ষে আগে থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সমাবেশ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে পুরানথানা এলাকার সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে এনসিপি নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন।