বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রকৃত অর্থে মানুষের সার্বিক বিকাশ ঘটাতে পারছে না। প্রকৃত শিক্ষা সেটাই- যার মাধ্যমে মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক এই তিনটি দিকের একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ বিকাশ ঘটে।’
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে কিশোরগঞ্জে শিল্পকলা অ্যাকাডেমি মিলনায়তনে এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাসপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ‘শুধু মেধাবী হলেই হবে না। মেধাবীরা মেধার কথা বলে, তরুণ প্রজন্ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, আবার সুযোগ পেলেই চুরি করে, দুর্নীতি করে। এখন দেখেন নাই? সমন্বয়ক-টমন্বয়ক হয়ে- আরে! দেশকে কী ভালোবাসে! এখন আবার চাঁদাবাজির দায়ে, ধর্ষণের দায়ে, সবকিছুর দায়ে ধরা খাচ্ছে। এর কারণটা হচ্ছে, ওই যে সেই মিলটনের থিওরি। এডুকেশানের মূল পারপাস সেখানে সার্ভ হয়নি।’
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কেবল জ্ঞান দিচ্ছি। মানসিক ও আত্মিক উন্নয়নের দিকে নজর দিচ্ছি না। ফলে ‘শিক্ষিত’ মানুষ তৈরি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তারা যেন একেকটা উৎপাদনের যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। আদর্শবান, নৈতিক ও মানবিক মানুষ তৈরি হচ্ছে না। তাই বলা হয়, যদি একজন শিশুকে তিনটি ‘R’ (Reading, Writing, Arithmetic) শেখানো হয় কিন্তু চতুর্থ ‘R’ অর্থাৎ Religious শিক্ষা না দেয়া হয়, তাহলে পঞ্চম ‘R’ হিসেবে সে হবে ‘Rascal’—অর্থাৎ নৈতিকতাহীন, বিপথগামী।’
ছাত্রশিবিরের এই নেতা আরো বলেন, ‘আজকে এটা অত্যন্ত ক্লিয়ার (স্পষ্ট) আমাদের দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু প্রকৃত মানুষ কমে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ, সহানুভূতি ও নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। পাথর মেরে হত্যা, সম্পদের লোভে ভাইকে হত্যা, মাদকের কারণে পিতাকে জবাই করে হত্যা—এসব কীসের পরিচয়? আমরা কেমন সমাজ গড়ে তুলছি? যেখানে ইসলামী শিক্ষা রয়েছে, সেসব সমাজে ধর্ষণ, আত্মহত্যা, পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা খুবই কম। অন্যদিকে, যেসব সমাজে কেবল পশ্চিমা দর্শন ও ভোগবাদী জীবনদর্শন প্রচলিত, সেখানে আত্মহত্যার হার বেশি, সামাজিক বন্ধন দুর্বল। কারণ, তারা সামাজিকীকরণের মূলনীতিই ভুলে গেছে। পশ্চিমা সংস্কৃতি মানুষকে কখনোই প্রকৃত শান্তি দিতে পারে না। যদি দিত, তাহলে তারা নিজেদের সুখের জন্য অন্য জাতিকে ধ্বংস করত না। আজকের এই কৃতী শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের সোনার বাংলাদেশের স্থপতি। তাদের শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, নৈতিকতা, আদর্শ ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা নিতে হবে। নিজেদের আলোকিত করার মাধ্যমে তারা দেশকেও আলোকিত করবে—এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ জেলার তিন শতাধিক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এসএসসি শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট, সংগঠনের বই, শিক্ষাসরঞ্জামসহ নানা উপহার তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের বিরতির মাঝে মাঝে চলে কোরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাসান আল মামুনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ফকির মাহবুবুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় এইচআরডি সম্পাদক শরীফ মাহমুদ, জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম, সাবেক নায়েবে আমির মুসাদ্দেক ভূঁইয়া, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি খালেদ হাসান জুম্মন প্রমুখ।