ফুলবাড়ীতে স্মার্ট কার্ড সংকটে টিসিবির সহায়তা কর্মসূচি স্থবির

ফুলবাড়ীর ছয়টি ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য কেনার উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ২১ হাজার ৩৫০। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র আট হাজার ৬৬৯ পরিবার হাতে পেয়েছে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড।

জাকারিয়া শেখ, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)

Location :

Phulbari

কুড়িগ্রামের সীমান্তঘেঁষা ফুলবাড়ী উপজেলায় স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড সংকটে থমকে গেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সহায়তা কর্মসূচি। উপজেলার তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের অর্ধেকেরও বেশি পরিবার এখনো নতুন স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় সরকারের নির্ধারিত মূল্যে নিত্যপণ্য কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে এসব পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ীর ছয়টি ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য কেনার উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা ২১ হাজার ৩৫০। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র আট হাজার ৬৬৯ পরিবার হাতে পেয়েছে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড। বাকি ১২ হাজার ৬৮১ পরিবার এখনো কার্ডের অপেক্ষায় রয়েছেন।

ইউনিয়নভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নাওডাঙ্গায় তিন হাজার তিনজনের মধ্যে কার্ড পেয়েছেন মাত্র ৭৫৬ জন, শিমুলবাড়ীতে দুই হাজার ৪২৪ জনের মধ্যে ৯৫১ জন, ফুলবাড়ীতে চার হাজার ৫৭৬ জনের মধ্যে দুই হাজার ২৩৩ জন, বড়ভিটায় তিন হাজার ৬২৩ জনের মধ্যে ৬১২ জন, ভাঙ্গামোড়ে তিন হাজার ৭৮৪ জনের মধ্যে এক হাজার ৯৬৭ জন এবং কাশিপুর ইউনিয়নের তিন হাজার ৯৪০ জনের মধ্যে কার্ড পেয়েছেন দুই হাজার ৩৭০ জন।

কার্ড না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন হাজারো উপকারভোগী। তারা জানান, চলতি বছরের শুরুতে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে পুরোনো ফ্যামিলি কার্ড জমা দিয়ে অনলাইনে তথ্য হালনাগাদ করেছেন। কিন্তু মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও নতুন কার্ড পাননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে একাধিকবার খোঁজ নিলেও তারা শুধু ‘এ মাসে আসবে, পরের মাসে আসবে’ বলে আশ্বাস দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছেন।

বড়ভিটা ইউনিয়নের দিনমজুর আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বর্তমান বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। টিসিবির পণ্য পেলে কিছুটা স্বস্তি পেতাম। কিন্তু নতুন কার্ড হাতে না থাকায় আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।’

ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, ‘পুরোনো ফ্যামিলি কার্ডে তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই সেগুলো জমা নিয়ে অনলাইনে নতুন তথ্য পাঠানো হয়েছে। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কার্ড প্রিন্ট হয়ে আসলেই উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। আশা করছি চলতি মাসেই বিতরণ শুরু হবে।’

ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী শেখ বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে প্রায় চার হাজার উপকারভোগীর মধ্যে দুই হাজারের মতো পরিবার নতুন কার্ড হাতে পেয়েছেন। কিন্তু অবশিষ্টদের এখনো অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা বারবার উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত বাকি কার্ড এসে যাবে। কার্ড এলে আমরা কোনো বিলম্ব না করে উপকারভোগীদের হাতে তা পৌঁছে দেব।’

এদিকে টিসিবির পণ্য না পাওয়ায় হাজারো পরিবার বাজারের অস্থির দামে নিত্যপণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির সময়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ বিলম্বিত হওয়ায় সরকারি সহায়তা কর্মসূচি কার্যত ভেস্তে যাচ্ছে। তারা দ্রুত কার্ড বিতরণে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদ্দৌলা জানান, ‘স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড প্রদানের কাজ চলমান রয়েছে। কিছু কার্ড ইতোমধ্যে এসে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি কার্ড আসলেই দ্রুত উপকারভোগীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে।’