বাকৃবি শিক্ষার্থীরা হল ছাড়াতে নারাজ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেন। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে কর্তৃপক্ষকে চারটি দাবি মেনে নিতে বলেন।

মো: সাজ্জাতুল ইসলাম, ময়মনসিংহ

Location :

Mymensingh
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) চলমান অস্থিরতার জেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীরা হল ছাড়তে নারাজ। কেউ কেউ হল ছেড়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের একাংশ ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল খালি করার জন্য ৯টার সময়সীমা বেঁধে দিলে এরপর অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেন। তবে শিক্ষার্থীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে কর্তৃপক্ষকে চারটি দাবি মেনে নিতে বলেন।

সকাল ৮টার দিক থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে কে আর মার্কেটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করবেন বলে জানা গেছে ।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হোসাইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল থেকে একদল শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা হাতে মিছিল বের করেন। তারা গতকাল রাতের হামলার বিচার চেয়ে এবং হল ছাড়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই সময়ে অন্য হল থেকেও শিক্ষার্থীরা কে আর মার্কেটের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে শুরু করেন।

হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। পাশাপাশি বহিরাগত হামলাকারীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

সকালে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে অবস্থান করছেন। বেগম রোকেয়া ও জুলাই ৩৬ ছাত্রী হলের কিছু নারী শিক্ষার্থী এরই মধ্যে ব্যাগ ও বইপত্র নিয়ে হল ত্যাগ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোকেয়া হলের এক নারী শিক্ষার্থী সমকালকে সকাল ৯টার দিকে জানান, গতকাল রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলা ছিল ন্যাক্কারজনক। পরিবার থেকে চাপের কারণে এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কায় তারা ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

অন্যদিকে, ঈশা খাঁ হলের কয়েকজন ছাত্র জানান, তারা হল ছাড়বেন না। রাতের বেলা নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেয়াটা এক ধরনের স্বৈরাচারী আচরণের পুনরাবৃত্তি।

তারা অভিযোগ করেন, কিছু শিক্ষক এই হামলার সাথে জড়িত। এ কারণেই এই ধরনের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুনির হোসাইন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল বহিরাগতরা হামলা চালানোয় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়েছে। বহিরাগতদের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ইন্ধন ছিল না। যারা হামলা চালিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা স্বার্থে জরুরি সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত মানা না মানার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পরিস্থিতি কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ। কিছু শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছেন। ক্যাম্পাসের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে না।

র‍্যাব-১৪-এর কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: সামসুজ্জামান জানান, ঘটনাস্থলে র‍্যাবের কয়েকটি দল মোতায়েন রয়েছে। রাতভর আমরা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য সজাগ ছিলাম। আশা করি, পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীরা হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে চারটি দাবি উত্থাপন করেন।

তাদের দাবিগুলো হলো, শুধু কম্বাইন্ড ডিগ্রি চালু রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় সম্পূর্ণ প্রক্টোরিয়াল বডিকে পদত্যাগ করতে হবে, ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও হামলার জন্য ভিসিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, এই হামলায় জড়িত শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে।