একাধিক সাংবাদিক নির্যাতনকারী দুর্নীতিবাজ আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আখতারুজ্জামান বাদল খাঁনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) গভীর রাতে পাতাকাটা একটি অনাথ আশ্রম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
বরগুনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালেহ বলেন, আখতারুজ্জামান বাদল খাঁন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাব, কালো টাকার প্রভাব ও পেশী শক্তির প্রভাব খাটিয়ে বিগত দিনে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করেছেন। এমনকি তার অপকর্মের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের একাধিক ঘটনা রয়েছে। কালো টাকা ও দলীয় প্রভাবই ছিল তার এমন কর্মকাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি। তিনি সাংবাদিক নির্যাতনকারী বাদল খানের শাস্তি দাবি জানান।
জানা গেছে, ২০১১ সালে ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে আখতারুজ্জামান বাদল খাঁন চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হন। এরপর কালো টাকা ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পরেন।
চাওড়ার পাতাকাটা গ্রামের জুয়েল মাদবরের অভিযোগ, সাংবাদিক, বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে নির্যাতন ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। তার নির্যাতনের হাত থেকে তার দলীয় নেতাকর্মীরাও রক্ষা পায়নি। তিনি গত ১৬ বছরে অন্তত শতাধিক মানুষকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছেন। তার মতের বিরুদ্ধে গেলেই তার ওপর নেমে আসতো নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার হয়রানি।
জহির মাতুব্বর নামে আরো একজন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ শাসন আমলে তিনি ছিলেন আমতলীর গডফাদার। জমি দখল, খাল দখল, টেন্ডারবাজি, দখলবাজী, নিয়োগ বাণিজ্য ও বাজার দখলসহ সকল অপকর্মের হোতা ছিলেন তিনি।
উত্তর ঘটখালী গ্রামের বশির উদ্দিন নামে আরো একজন অভিযোগ করেন, উপজেলা সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম ও মহিবুল্লাহ কিরণের নেতৃত্বে তার ছিল একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনী। তারা তার নির্দেশে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতেন।
এছাড়াও তিনি একাধিক সেতু নির্মাণ ও খাল খনন কাজ না করে অন্তত ১৫ কোটি টাকার অধিক আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রভাব খাটিয়ে তিনি ওই মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছেন। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার পতনের পরেও আওয়ামী লীগের বেশিভাগ নেতা পালিয়ে গেলেও তিনি পালায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপির নেতাকর্মী অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় তিনি গত আট মাস ধরে অবাধে চলাফেরা করছেন। পুলিশ প্রশাসনও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পায়নি। গত বছর ৫ আগষ্ট উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাংচুর মামলায় তাকে আসামি করা হয়। কিন্তু ওই বিএনপি নেতাদের সখ্যতায় তিনি আদালত থেকে জামিন নেন।
এছাড়া আরো অভিযোগ রয়েছে বিএনপি ওই প্রভাবশালী নেতাদের মমদে তিনি চাওড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা এলাকার একটি অনাথ আশ্রমের সনাতনী ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। খবর পেয়ে চাওড়া ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে ওই আশ্রমে আটকে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
চাওড়া ইউনিয়ন যুবদল সদস্য সচিব আখতারুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে ঘরে ঘুমাতে পারিনি। অহেতুক মিথ্যা মামলা দিয়ে বাদল খাঁন হয়রারি করেছে। বেশ কয়েকবার বাদল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে নির্যাতন করেছে। তার কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
বরগুনা জেলা সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কদের বলেন, একাধিক সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছিতকারী আখতারুজ্জামান বাদল খানের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে বিনা খরচে তাদের পক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মো: আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, গত বছর ৫ আগষ্ট পৌরসভা কার্যালয় ভাঙচুর মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে আজ আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।