জুলাই বিপ্লবের আন্দোলন শুধু একটা নির্বাচনের জন্য হয়নি : ফয়জুল করীম

প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্থার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে কিশোরগঞ্জের গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

মো: আল আমিন, কিশোরগঞ্জ

Location :

Kishoreganj
বক্তব্য রাখছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম
বক্তব্য রাখছেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম |নয়া দিগন্ত

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের আন্দোলন শুধু একটা নির্বাচনের জন্য হয়নি। এ সময় তিনি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্থার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে কিশোরগঞ্জের গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

ইসলামী আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে জেলা শহরের আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের আন্দোলন শুধু একটা নির্বাচনের জন্য হয়নি। বিপ্লব কেন হয়েছিলো- ওয়ালে ওয়ালে খাম্বায় খাম্বায় মানুষকে লিখে দিয়েছে। আমি সাংবাদিক বন্ধুদের প্রশ্ন করতে চাই, আমাকে দেখান তো কোন ওয়ালে বা কোন খাম্বার মধ্যে লেখা আছে- নির্বাচন চাই। একটা নিদর্শন আমাকে দেখান। যারা জুলাই-আগস্টের সৈনিক ছিলো তারা ওয়ালে লিখেছে- আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমার নজরে এমন লেখা কোনো জায়গায় পড়েনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কেন হয়েছিলো? তিনটা উপহার আমাদের দিবে- সংস্কার, বিচার, নির্বাচন। কিন্তু কোনো কোনো দল সংস্কারের কথা বলে না, বিচারের কথা বলে না। বলে শুধু নির্বাচন নির্বাচন। কেন, নির্বাচন দিয়ে কি হবে? যদি লুটেরা, চোরেরা, ডাকাতরা, ধর্ষকরা আবারো ক্ষমতায় আসে, এদের বিরুদ্ধে আবারো সংগ্রাম করতে হবে। মানুষ কতবার জীবন দিবে? কতবার আন্দোলন করবে? কতবার সংগ্রাম করবে?’

পিআর সিস্টেমে নির্বাচন দাবি করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন জরিপের মধ্যে আসছে, ৭১ পার্সেন্ট মানুষ পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায়। সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চায়। পিআর সিস্টেমে নির্বাচন হলে চাঁদাবাজি থাকবে না। গুণ্ডামি থাকবে না। নমিনেশন বাণিজ্য চলবে না। পেশীশক্তি ব্যবহার করা হবে না। কালো টাকার ব্যবহার হবে না। প্রত্যেকটা মানুষ তার ভোট দেয়ার রায় ব্যবহার করতে পারবে। সমহারে সমস্ত মানুষ ভোট দিতে পারবে। সমস্ত জনগণের সংসদ হবে। যে সংসদের মধ্যে সমস্ত দলের আদর্শ ও নীতির মানুষ থাকবে। তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবে। এজন্যে পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চাই।’

ফয়জুল করীম বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে সত্য সংবাদ প্রকাশ করার কারণে সাংবাদিকরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। সাংবাদিক তুহিনকে জীবন দিতে হয়েছে। আজকে আমরা কি দেখেছি, সত্য কথা বলার কারণে সারজিসের বিরুদ্ধে আবার নতুনভাবে মামলা হয়েছে। আমি আশ্চর্য হয়ে যাই ‍বিএনপির প্রতি। আমার করুণা হয়। যারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে আন্দোলন করেছে, আজকে তাদেরকে তোমরা নিন্দা করতেছো! তাদের বিরুদ্ধে কেস দিয়েছো! আজকে তারেক জিয়া বাংলাদেশে ফেরার স্বপ্ন দেখতো না, যদি সারজিসরা না থাকতো! আজকে তোমার নেত্রীকে চিকিৎসা করার জন্য বিদেশে পাঠাতে পারতো না! যদি আজকে ওরা না থাকতো! আজকে খোলা আকাশের নিচে মাঠের মধ্যে রাজনীতি করতে পারতা না। কিন্তু আজকে যাদের মাধ্যমে নেত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছো, তোমার নেতাকে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করতেছো, আজকে নির্বিঘ্নে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছো, আজকে সত্য কথা বলার কারণে সেই সারজিসের বিরুদ্ধে কেস দিয়েছো! বাংলাদেশের মানুষ তোমাদের ঔদ্ধত্যকে কোনো অবস্থাতেই মেনে নেবে না, মানতে পারে না।’

সিলেটের পাথর লুটপাট নিয়ে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘আজকে সাদা পাথর লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। আমি বক্তব্য দিয়েছিলাম, পাথর কোয়াড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য, আমাদের খনিজ পাথর উত্তোলন করার জন্য। আমি লুটপাট করার জন্য বক্তৃতা করিনি। আমি ভারত থেকে পাথর চড়া দামে আনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম যে, আমাদের দেশের পাথর উত্তোলন না করে ভারত থেকে পচা পাথর চড়া দামে আনে- এর বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে আজকে তারা বলতেছে, আমার বক্তৃতার কারণেই নাকি তারা পাথর চুরি করেছে। বেয়াকুবের অবস্থা কোথায়! আমি মনে করি পরিবেশ উপদেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি পাথর কোয়াড়িকে ছেড়ে না দিয়ে বরং লুট করার ব্যবস্থা করেছেন। লুট করার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে। আপনাদের ধারণা কি? এতোগুলো পাথর কি একদিনে সরানো হয়ে না দীর্ঘদিনে সরানো হয়েছিলো? মাসকে মাস যারা পাথর চুরি করছে, বহিষ্কার করা হয়নি। আমি আগেই বলছি, চাঁদা তুললে পুরস্কার, ধরা পড়লে বহিষ্কার, ভাইরাল হলে গ্রেফতার। এতদিন চাঁদা তুলছে, বহিষ্কার করেনি, এতদিন পাথর চুরি করছে, বহিষ্কার করেনি। যখনই ধরা পড়ছে, বহিষ্কার করছে, দেখছেন অবস্থাটা কি! কতো সুন্দর ব্যবস্থা!’

গণসমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার সময় মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার তিনটি সংসদীয় আসনে ইসলামী আন্দোলনের তিন প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন। তারা হলেন, কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি প্রফেসর হাফেজ মাওলানা আজিজুর রহমান জার্মানি, কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক হাফেজ মাওলানা মো: আলমগীর হোসাইন তালুকদার এবং কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে বাংলাদেশ ইসলামী আইনজীবী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো: বিল্লাল আহমেদ মজুমদার।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি প্রভাষক হাফেজ মাওলানা মো: আলমগীর হোসাইন তালুকদারের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি মাওলানা নোমান আহমাদ। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।