অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ‘মোটা চাল পলিশ করা হয় কিন্তু সরু করার কোনো মেশিন নেই। তবে পলিশটা যাতে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়, সে জন্য আমরা নজরদারি বাড়াবো।’
সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে মানিকগঞ্জের সার্কিট হাউজে জেলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি দেশের সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তা, খাদ্য মজুদ, খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
মোটা চাল কেটে চিকন করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাকে খুব বড় মিল মালিকরা ও বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টাও একজন বড় ব্যবসায়ী, তিনি বলেছেন, চাল সরু করা যায় না। তবে অটোরাইচ মিলে মোম পলিশসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করে চালের রং ফর্সা করা হয়। যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ও চিকিৎসকরা।’
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহম্মেদ বলেন, ‘মিনিকেট নামে বাংলাদেশে ধানের কোনো জাত নেই। মূলত ব্যবসায়ীদের দেয়া নাম এটি। মোটা চাল কেটে মিনিকেট ও নাজিরসাইল চাল তৈরি করা হয়। অটোরাইচ মিলের কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রথমে মোটা চাল হাসকিংয়ের মাধ্যমে, দ্বিতীয় ধাপে ডিব্রানিং, তৃতীয় ধাপে সাইজ এবং চতুর্থ ধাপে পলিশ করা হয়। এ চালের মধ্যে মোটেও কোনো খাদ্যমান থাকে না। বরং কম দামের চাল প্রক্রিয়া করে মানুষের কাছ থেকে বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। ভাতের মাড় ফেলে দিলে আমরা শুধু ভূসি খাচ্ছি।’
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ন ডা: মো: বাহাউদ্দিন বলেন, ‘চালের মধ্যে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স থাকে যা লিভার ভালো রাখতে দারুণ ভূমিকা রাখে। মূলত চালগুলোকে লেজারের মাধ্যমে কেটে একটি চালকে দু’টি বানানো হচ্ছে, মোম ও কেমিক্যাল দিয়ে পলিশ করা হচ্ছে। এ সবের মাধ্যমে মানুষের লিভার নষ্ট হচ্ছে, মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, মানুষের হজমে সমস্যা হচ্ছে। বলতে গেলে মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। পোলাওর চালে সুগন্ধির নামে কেমিক্যাল ও মুড়ির চালে ইউরিয়া মেশানো হচ্ছে।’
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ৫৫ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
খাদ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আগস্ট থেকে ডিসেম্বর এই চার মাস এই কর্মসূচি চলবে, আবার দুই মাস গ্যাপ দিয়ে পরের দুই মাস চাল দেয়া হবে। কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পেয়েছে, ৩৬ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৯ টাকা করে চালের দাম দেয়া হয়েছে, যা কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের সর্বকালের সেরা দাম পেয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ ২১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মওজুদ আছে। তবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে বছরে প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন।’
চার হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য চ্যানেল ওপেন করা আছে বলেও জানান তিনি।
এ সময় জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা, পুলিশ সুপার মোসা: ইয়াছমিন খাতুন, মানিকগঞ্জ সকল উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।