পটুয়াখালীতে একসময় দাড়ছিঁড়া ছিল প্রমত্তা নদী। যেখানে নৌকার বৈঠা ভেঙে যেত, যার কারণে এর নামকরণ করা হয় ‘দাড়ছিড়া’। তবে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের কারণে নদীটি তার নাব্যতা হারিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। যেখানে এখন নৌকা চালানোও কঠিন।
রাঙ্গাবালী উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ দাড়ছিড়া নদী প্রায় মৃত এখন। এ নদীপথে চলাচল করত বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ ও ট্রলার। অথচ আজ সে নদী এমনভাবে ভরাট হয়ে গেছে যে, ভাটার সময় খেয়া নৌকাও চলাচল করতে পারছে না। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবী ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ।
দুই ইউনিয়নের মানুষদের উপজেলা সদরে যেতে একমাত্র পথ দাড়ছিঁড়া নদী। ভাটার সময় এই নদীর পানির স্তর এত বেশি নিচে নেমে যায় যে, খেয়া নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। জরুরি প্রয়োজনে কেউ উপজেলা সদরে যেতে চাইলে তাকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় নদীতে জোয়ারের আশায়। এতে চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রশাসনিক কাজ বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে মানুষ সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না।
বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: নিজাম হাওলাদার বলেন, ‘একদিন খুব জরুরি কাজে রাঙ্গাবালী সদর যাচ্ছিলাম, কিন্তু গিয়ে দেখি ভাটায় নদী শুকিয়ে গেছে, খেয়া চলাচল বন্ধ। তিন-চার ঘণ্টা বসে ছিলাম জোয়ারের অপেক্ষায়। এমন কষ্ট প্রতিনিয়ত করতে হচ্ছে আমাদের।’
মৌডুবী ইউনিয়নের সেলিম হাওলাদার বলেন, ‘দাড়ছিঁড়া নদী এখন মৃতপ্রায়। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের ইউনিয়ন দু’টি উপজেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, নদীটি খননের বিষয়ে একাধিকবার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একাধিক বার আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
তারা বলেন, এ নদী শুধু যোগাযোগের জন্য নয়, বর্ষার মৌসুমে নদীর পানি আশপাশের কৃষিজমি রক্ষা করে। খনন না হলে বর্ষায় প্লাবন ও শুস্ক মৌসুমে পানি সংকট এবং যাতায়াত উভয় দিকেই ভোগান্তি বাড়বে।
স্থানীয়রা আরো বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের এ গুরুত্বপূর্ণ নদীটি যদি অবিলম্বে খনন না করা হয় তাহলে হাজার হাজার মানুষের জীবনে নেমে আসবে দুর্যোগ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডেও দেখা দেবে স্থাবিরতা।
অবিলম্বে দাড়ছিঁড়া নদী খননের দাবি জানিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি কামনা করেছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপই পারে এ দুর্ভোগ থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে।



