তারেক রহমান

ঐক্যবদ্ধ না হতে পারলে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে

তিনি বলেন, ‘জনগণ যেভাবে চায়, আমাদের সেভাবে চলতে হবে। সবার আগে বাংলাদেশ। এটিই আমাদের শুরু, এটাই আমাদের শেষ, সবার আগে বাংলাদেশ।’

হাবিবুর রহমান চৌধুরী, কুমিল্লা

Location :

Cumilla
বক্তব্য রাখছেন তারেক রহমান
বক্তব্য রাখছেন তারেক রহমান |নয়া দিগন্ত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, আমরা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, আগামী দিনে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ যেভাবে চায়, আমাদের সেভাবে চলতে হবে। সবার আগে বাংলাদেশ। এটিই আমাদের শুরু, এটাই আমাদের শেষ, সবার আগে বাংলাদেশ।’

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়্যালি এসব কথা বলেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘বক্তব্য অনেক হয়েছে। এখন আমাদের কাজ করতে হবে। আজকে সম্মেলনের স্লোগান হোক— ঐক্য, জনগণ এবং পুনর্গঠন। আমাদের নেতাকর্মীরা হাজার হাজার জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করেছে। জেলে গিয়েছে, গুম হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখনই সময়, সকলে মিলে কাজ করে সুন্দর ঘর গঠন করি। সবাই মিলে সুন্দর ঘর নির্মাণ করতে হবে। এই বাংলাদেশকে গঠন করতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হবে। মিটিং করে জনগণের কাছে যাওয়া যাবে না। প্রতিটি ঘরে ঘরে যেতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’

এদিন ১৬ বছর পর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। বিশেষ অতিথি বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী ও আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো: আবুল কালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মোস্তাক মিয়া।

সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন। সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম।

প্রধান বক্তা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এমন একটি প্রত্যাশিত দিন দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। ১৬ বছর পর এমন একটি দিন পেলাম। আমরা সুখের দিনে অতীত ভুলে যাই। আমরা যেন বিস্মৃত না হই। এই দেশ থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে যে পরিমাণ ঋণ হয়েছে সেই টাকা দিয়ে ৪০টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। ব্যাংকিং সেক্টর পাঁচ লাখ কোটি খেলাপি ঋণে জর্জরিত। এই আওয়ামী লীগের ইতিহাস লুটপাটের ইতিহাস।’

‘জুলাই অভ্যুত্থানে ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ মারা হয়েছে, ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে। এ বিষয়টি আমরা যেন ভুলে না যাই। আমরা এখনো সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সংস্কারের সংগ্রাম, বিচারের সংগ্রাম মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অতীতে মানুষ ভাষণ শুনেছে, শোষণের শিকার হয়েছে। ভাষণ ও শোষণের বিরুদ্ধে মানুষ সোচ্চার রয়েছে। এই দেশের মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। প্রত্যেকটি অপরাধের বিচার হবে। কিন্তু এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যার জন্য নির্বাচন প্রলম্বিত হতে পারে না,’ বলেন তিনি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ‘মানুষ পিআর কাকে বলে চিনে না জানে না, আপনি ভোট দিবেন একজনকে, কিন্তু আপনার জনপ্রতিনিধি হবে অন্য আরেকজন। ভোট কেবল মার্কাই নয়, ভোট নেতার সাথে ভোটারদের একটি আত্মার বন্ধন।’

তিনি বলেন, ‘মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার প্রেক্ষিতেই মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে রূপান্তর করতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজার সৃষ্টি করেন।’

নতুন নেতৃত্ব

১৬ বছর পর শনিবার হওয়া কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির এ সম্মেলন বর্তমান আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনকে সভাপতি ও সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। এতে বেগম রাবেয়া চৌধুরী সভাপতি, আমিন উর রশিদ ইয়াছিন সাধারণ সম্পাদক ও মো: মোস্তাক মিয়া সাংগঠনিক সম্পাদক হন। কুমিল্লার ছয়টি সংসদীয় আসনের ১০টি উপজেলা, চারটি পৌরসভা, ১০৭টি ইউনিয়ন, ৯৯৯টি ওয়ার্ডে সম্মেলন হয়।