লক্ষ্মীপুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলো ভালো নেই

‘প্রত্যেক শহীদ পরিবারের পাশে রয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ যেসব যোদ্ধা রয়েছেন, তাদের চিকিৎসা চলছে। সব সময় শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে রয়েছে সরকার।’

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

Location :

Lakshmipur
লক্ষ্মীপুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলো ভালো নেই
লক্ষ্মীপুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলো ভালো নেই |নয়া দিগন্ত

লক্ষ্মীপুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলো ভালো নেই। গুলিবিদ্ধ অনেকেরই টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। বাহিরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন গুলিবিদ্ধ আহত অনেকেই। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে লক্ষ্মীপুর ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্নস্থানে এই জেলার ১৭ জন শহীদ হন। প্রতিটি শহীদ পরিবারের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন গল্প। মামলা করে ভয়ে দিন কাটছে তাদের।

তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, প্রত্যেক শহীদ পরিবারের পাশে রয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ যেসব যোদ্ধা রয়েছেন, তাদের চিকিৎসা চলছে। লক্ষ্মীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মেধাবী চার শিক্ষার্থী শহীদ হন। ৪ আগস্ট শহরের তমিজ মার্কেট এলাকায় বাসার ছাদ থেকে প্রকাশ্যেই সাবেক যুবলীগের আহ্বায়ক ও অপসারিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহউদ্দিন টিপুর গুলিতে চার শিক্ষার্থী শহীদ হন।

মাদাম ব্রিজ এলাকায় ছাত্রদের উপর প্রথম গুলিবর্ষণ করেন এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু, বায়েজিদ ভূঁইয়া, সেবাব নেওয়াজ, হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী, শামীমসহ অনেকে। মাদাম ব্রিজ এলাকায় প্রথম শহীদ হন সাদ আল আফনান। এ সময় আহত হন অন্তত তিনশ'র বেশি ছাত্র-জনতা। এছাড়া লক্ষ্মীপুরের ১৩ জন শহীদ হন ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ভবানীগঞ্জের শফীপুর এলাকায় ছোট্ট জীর্ণ একটি টিনের ঘরে দুই মেয়ে স্ত্রী নিয়ে আমির হোসেনের বসবাস। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বড় ছেলে সাব্বির হোসেন। সাব্বিরের স্ত্রী ও এক শিশুসন্তান রয়েছে। ৪ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে লক্ষ্মীপুর যুবলীগের গুলিতে মারা যান সাব্বির। একই সময় মারা যান কাউছার হোসেন বিজয়, সাদ আল আফনান ও ওসমান গনি। ঘটনার প্রায় বছর হতে চলছে। এখনো ছেলের শরীরের ক্ষত-বিক্ষত গুলির ছিন্নভিন্ন ছবি বুকে নিয়ে কান্নাকাটি করছেন নিহত সাব্বিরের মা মায়া বেগম ও বাবা আমির হোসেন। কোনোভাবেই এটি মেনে নিতে পারছেন না তারা। তবে যে আশায় সাব্বিরের মতো ছাত্ররা বুকের রক্ত দিয়ে দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন করেছেন। তা যেন মুছে না যায়। পাশাপাশি খুনি হাসিনাসহ জড়িতদের বিচার ও গ্রেপ্তার নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।

শুধু নাছিমা আক্তার ও আমির হোসেনই নন, প্রায় একই চিত্র জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রত্যেক শহীদের পরিবারে। ঘটনার বছর পার হতে চলছে। কিন্তু সাব্বিরের স্বজনদের মতো অন্য শহীদ পরিবারের সদস্যরা এখনো স্বজন হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। কেউ কেউ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তবে অনেক শহীদ পরিবারই পাচ্ছেন পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা।

শহীদ সাদ আল আফনানের মা নাসিমা আক্তার বলেন, ছেলে হারানোর দুই মাস আগে স্বামীকে হারিয়েছি। পরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। মামলা করেও ভয়ে অন্যত্রে বসবাস করি। এখনো বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছি। তবে পুলিশের সহযোগিতা ও নিরাপত্তার বিষয়টিতে সন্তুষ্ট প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে কীভাবে দিন যাবে, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। পাশাপাশি যুবলীগ নেতা একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু ওদিকে খুনি হাসিনার বিচার ও সংস্কার না হওয়ায় পর্যন্ত নির্বাচন যেন না হয়- সেটাই আশা করেন তিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) মো: রেজাউল হক বলেন, ‘শহীদ ও আহত পরিবারগুলোর পাশে জেলা পুলিশ রয়েছে। শহীদ পরিবারকে সার্বিক নিরাপত্তা ও কোনো কোনো শহীদ পরিবারকে বাসাভাড়াসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এটি অব্যাহত রাখা হবে।’

জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলছেন, ‘প্রত্যেক শহীদ পরিবারের পাশে রয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ যেসব যোদ্ধা রয়েছেন, তাদের চিকিৎসা চলছে। সব সময় শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে রয়েছে সরকার।’