নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) দুজন শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিশেষ পরীক্ষার আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ আবজাল খান তপু এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম।
তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা (আইএসএলএম) বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ আবজাল খান তপু স্নাতকের শেষ সেমিস্টারে উপস্থিতির শর্ত পূরণ না করেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ৬০ শতাংশ উপস্থিতি না থাকলে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। পরে বিভাগীয় শিক্ষকদের মাধ্যমে অনলাইনে বিশেষ ক্লাসের মাধ্যমে উপস্থিতি পূরণ করানো হয় এবং বিশেষ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। এতে নতুন প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শুরু করে আলাদা পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। পরীক্ষার খরচ বাবদ তিনি ২৩ হাজার ১০ টাকা জমা দিলেও প্রশ্নপত্র মডারেশন ফি মওকুফ করা হয়।
এ বিষয়ে তথ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শাহ আবজাল খান তপু স্নাতকের সর্বশেষ সেমিস্টারে নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করতে পারায় আমরা তাকে নিয়মিত পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেই নাই। পরবর্তী সময়ে বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং নোবিপ্রবিসহ সেন্ট্রাল সমন্বয়করা জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি নিয়ে তপুর পরীক্ষা নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিশেষ অনুমতিতে মানবিক বিবেচনায় তার পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।’
অন্যদিকে, ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলামকেও স্নাতক চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পাঁচটি বিষয়ে বিশেষ পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এতগুলো কোর্সে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ নেই। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি নিজেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে সরে আসেন।
এ বিষয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রথমে আবেদন করলেও পরে আর পরীক্ষায় বসিনি। আমি চাই না, আগের মতো বিশেষ সুবিধা নিয়ে কেউ পরীক্ষা দিক।’
এ বিষয়ে ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘জাহিদুল ইসলাম অসুস্থতার জন্য পরীক্ষা দিতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা তার জন্য বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু আবেদনের নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় এখন আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাকে আবার পরবর্তী ব্যাচের সাথে পুনরায় ভর্তি হয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অধ্যাদেশ অনুযায়ী, স্নাতক শেষে সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে ব্যাকলগ পরীক্ষা দেয়ার বিধান থাকলেও চলমান সেমিস্টারে পরীক্ষায় বসার জন্য ‘বিশেষ অনুমতি’ প্রথার কোনো উল্লেখ নেই। শিক্ষা অধ্যাদেশের ৯(৪)(C) অনুচ্ছেদে স্পেশাল পরীক্ষার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী যদি স্নাতক শেষ করার পর কোনো ব্যাকলগ থাকে তাহলে তা চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পর দিতে পারবে। তবে সর্বোচ্চ তিনটি কোর্স বা ১৫ ক্রেডিটের বেশি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। পাশাপাশি তাকে অবশ্যই রেগুলার পরীক্ষার বসার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো আইন অথবা অধ্যাদেশে বিশেষ অনুমতি নিয়ে পরীক্ষা দেয়ার নিয়মের বিষয়ে উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা উপ-নিয়ন্ত্রক মো: শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই দুইজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়েছে। কেউ আবেদন করলে আমাদের দায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা পেশ করা। কর্তৃপক্ষ যদি অনুমতি দেয় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’
বিশেষ নিয়মে পরীক্ষা দেয়ার বিষয়ে এই উপ-নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘শিক্ষা অধ্যাদেশে বিশেষ অনুমতি নিয়ে পরীক্ষা দেয়ার আইন নেই। তবে পরীক্ষার খরচ বহন করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছিল বিধায় তার পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: ইসমাইল বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে কিভাবে, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। কোনো অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’