জুলাই ৩৬ বিপ্লবে শহীদ মো: ওমর বিন নুরুল আবছার বেঁচে থাকলে আজ সে বিমানের ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণসহ দেশের হয়ে কাজ করতেন। তার সে আশা পূরণের মাত্র তিন মাসের মাথায় বিজয় মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
৫ আগস্ট ২০২৪ বেলা পৌনে ৪টার দিকে উত্তরার জসিমউদ্দীন রোডে সে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ওই দিন সন্ধা ৬টার দিকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে শাহাদাৎবরণ করেন।
জুলাই ৩৬ বিপ্লবে শহীদ মো: ওমর বিন নুরুল আবছার(২২) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের আকুদন্ডি গ্রামের প্রবাসী মো: নুরুল আবছার ও রুবি আকতারের ছেলে। শহীদ ওমর ছিলেন পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে মেঝ ছিল। তিনি শহীদ ওমর নুরুল আবছার ২০ জানুয়ারি ২০০২ সালে পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইংরেজি কারিকুলামে পড়াশোনা করেন। তার স্বপ্ন ছিলো, তিনি বিমানের ইঞ্জিনিয়ার হবেন। পরে সে চট্টগ্রাম ক্যান্টন্টমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভর্তি হন এবং এইচএসসি পরিক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এরপর বিমানের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারে ভর্তি হন। শেষ মডিউলে পড়ছিলেন। গ্রাজুয়েশন শেষ করতে বাকি ছিলো মাত্র তিন মাসের মতো বলে জানিয়েছেন শহীদ ওমরের ছোট ভাই মোহাম্মদ বিন নুরুল আবছার।
তার ভাই জানান, পড়া শেষ হওয়ার আগেই বেশ কয়েকটি চাকরির অফার পেলেও সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাজপথে থেকে লড়াই করার সিদ্ধান্তে ছিল অটল।
এর আগে ১৮ জুলাই রাবার বুলেটে আহত হয়েছিল শহীদ ওমর। পরে ৫ আগস্ট ২০২৪ বিজয় মিছিলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে তিনি উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটালে শাহাদাৎ বরণ করেন।
শহীদ ওমরের ভাই জানান, দুপুর ১টার দিকে মায়ের সাথে মোবাইলে কথা বলেন, আমরা জানতে পারি ৩:৪৫ মিনিটে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ৬:২৬ মিনিটে (ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী) শাহাদাত বরণ করেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)।
তাকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিক্যালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা করে নাই তার। পরে রাস্তায় কয়েকজন ছেলে মিলে তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটালে নিয়ে যায় এবং সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় শাহাদাৎ বরণ করেন ওমর। এরপর আমরা যেতে পারি নাই যেহেতু পরিস্থিতি ভালো ছিলো না তাই গাড়ি পাচ্ছিলাম না। পরে তার বন্ধুরা এবং সিনিয়ররা একটা ফ্রিজার গাড়ী করে পাঠিয়ে দেয়। তারপর ভোর ৪টার দিকে আমার ভাইয়ের লাশ বুঝে নেয়া হয়।
শহীদ ওমরের মায়ের বরাত দিয়ে তার ছোট ভাই মোহাম্মদ বিন নুরুল আবছার বলেন, ‘তার স্বপ্ন ছিলো খুব উঁচু। মায়ের ইচ্ছা ছিল সে ডাক্তার হবে। কিন্তু তার ইচ্ছে ছিলো বিমান নিয়ে।’
‘আমার ভাই কখনো রাজনীতি করতো না, একদিন পথে হেঁটে যাচ্ছিল, তার পাশে একটা চাকরিজীবি বয়স্ক মানুষ ছিলো, সে ওই সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছি এবং সেখানেই সে মারা যায়। সে দৃশ্য আমার ভাই ভুলতে পারেনি তাই সে আন্দোলনে শরিক হন।’
এদিকে ২৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর নিজ বাড়ির কবরস্থান থেকে দাফনের প্রায় ১১ মাস পরে আন্দোলনে শহীদ ইঞ্জিনিয়ার মো: ওমর বিন নুরুল আবছারের(২২) লাশ সুরতহাল এবং ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন পূর্বক পরবর্তীতে সুরাতহাল ও ময়নাতদন্তের পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে পুনরায় তার লাশ দাফন করা হয়।
বোয়ালখালী নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট ও বোয়ালখালী সহকারী কমিশনার(ভূমি) কানিজ ফাতেমার উপস্থিতিতে কবর থেকে জুলাই শহীদ ওমরের লাশ উত্তোলন করা হয়েছিল ।
লাশ উত্তোলনের সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক ও বোয়ালখালী থানা পুলিশ সহযোগিতা করেন। এসময় শহীদ ওমরের মা ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শহীদ মো: ওমর বিন নুরুল আবছারের পরিবার এখন ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন।