মিয়া গোলাম পরওয়ার

গণভোটের দাবি উপেক্ষা করলে জাতীয় নির্বাচন সংকটে পড়তে পারে

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় খুলনা-৫ আসনের ফুলতলা উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের যুগ্নীপাশায় ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

এরশাদ আলী, খুলনা ব্যুরো

Location :

Khulna
বক্তব্য রাখছেন মিয়া গোলাম পরওয়ার
বক্তব্য রাখছেন মিয়া গোলাম পরওয়ার |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘গণভোটের দাবি কোনো রাজনৈতিক দলের চাপের মুখে উপেক্ষা করলে জাতীয় নির্বাচন সংকটে পড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।’

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় খুলনা-৫ আসনের ফুলতলা উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের যুগ্নীপাশায় ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য দলেরও নোট অব ডিসেন্ট আছে। ফলে ঐকমত্য কমিশন গণভোটের জন্য যেভাবে জুলাই জাতীয় সনদের প্রস্তাবনা তৈরি করেছে সেটিকে চূড়ান্ত করে গণভোটের প্রস্তাবনা তৈরি করতে হবে। সেখানে কোনো নোট অব ডিসেন্ট যুক্ত হবে না, এটিই হচ্ছে গণদাবি।’

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংকট নিরসনে পারস্পারিক আলোচনার প্রস্তাবকে জামায়াতে ইসলামী স্বাগত জানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জামায়াত আগেই বিএনপিসহ সকল দলকে আলোচনায় বসে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব একমত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারকেই মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই গণভোটের তফসিল ঘোষণা হচ্ছে গণদাবি। জুলাই সনদে সাক্ষরকারী দল সমূহের সেই সব বিষয়ে এখন ভিন্নমত পোষণ করা অথবা নোট অব ডিসেন্টকে গণভোটে যুক্ত করার দাবি হচ্ছে অন্যায় দাবি। এগুলো পরিহার করে জাতীয় স্বার্থে, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার স্বার্থে অবিলম্বে নোট অব ডিসেন্ট ছাড়াই গণভোটের প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের তারিখ ঘোষণা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সরকারের ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনের ডেড লাইন ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। এ জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, গণহত্যাকারীদের বিচার, ফ্যাসিস্টের দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

সৈয়দ আবু জাফরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি গাউসুল আজম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা।

আরো বক্তৃতা দেন ফুলতলা উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুল আলীম মোল্লা, সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আলী আকবর মোড়ল, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য ড. আজিজুল হক, ছাত্রশিবিরের খুলনা জেলা উত্তর এইচআরডি সম্পাদক হুসাইন আহম্মেদ, জেলা পাঠাগার সম্পাদক বোরহান হোসেন, ফুলতলা থানা সভাপতি আব্দুর রহীম, ফুলতলা ইউনিয়ন আমীর মাস্টার মফিজুল ইসলাম, ইউনিয়ন সেক্রেটারি হাফেজ আল আমীন প্রমুখ।

পরে রাত সাড়ে ৭টায় আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের মশিয়ালী দক্ষিণপাড়ায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্যোগে ভোটার সমাবেশেও সেক্রেটারি জেনারেল প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি কামাল হোসেনের পরিচালনায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সে সমাবেশে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘২৪-এর গণ-আন্দোলনের ছাত্র-জনতার যুদ্ধ ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আর আমাদের দ্বিতীয় যুদ্ধ হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই দ্বিতীয় যুদ্ধে ছাত্র-জনতাকে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে পাঠাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব পেলে প্রথম কাজ হবে বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে এমন ব্যবস্থা চালু করা, যাতে সবার শিক্ষা নিশ্চিত হয়। দ্বিতীয় কাজ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন।’