আমতলীতে শ্রমিকদল নেতাকে হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

‘আমতলী সদর ইউনিয়ন শ্রমিকদল সাধারণ সম্পাদক নিহত শাহীন খাঁন দলের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। তাকে দলীয় কোন্দলের বলি হতে হয়েছে।’

আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা

Location :

Amtali
আমতলীতে শ্রমিকদল নেতাকে হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
আমতলীতে শ্রমিকদল নেতাকে হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে মানববন্ধন |নয়া দিগন্ত

বরগুনার আমতলী সদর ইউনিয়ন শ্রমিকদল সাধারণ সম্পাদক পল্লী চিকিৎসক মো: শাহীন খাঁনকে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলটি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে থানার সামনের সড়ক দিয়ে গিয়ে সাকিব প্লাজায় শেষ হয়। পরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করা হয়।

জানা গেছে, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক পল্লী চিকিৎসক শাহীন খাঁনকে খুরিয়ার খেয়াঘাট এলাকার জালাল ফকিরের স’মিলের ভাড়াটিয়া মালিক কাজল মৃধা গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে রোগী দেখার কথা বলে ডেকে নেয়। পরে আমতলী-কুয়াকাটা মহাসড়কের সাকিব খাঁনের বাসার পাশে নিয়ে তাকে কাজল মৃধা, ইসাহাক মৃধা ও জালাল ফকিরের বাসার ভাড়াটিয়া শাহারুলসহ ৮-১০ জন মারধর করে।

গত সোমবার বেলা ১১ টার দিকে আহত শাহীন খাঁনকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: হুমায়ুন আহমেদ সুমন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠান। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান।

এদিকে ওইদিন রাত ২টার দিকে শাহীন খানের লাশ আমতলী থানায় নিয়ে আসা হয়। তার ছেলে বায়েজিদ খাঁন চয়নের অভিযোগ আমতলী থানায় ওসি মো: আরিফুল ইসলাম আরিফকে লাশের ময়নাতদন্ত করানো ও মামলা নেয়ার অনুরোধ করলে তিনি মামলা নেয়নি। উল্টো তাকে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন এবং দ্রুত লাশ দাফনের নির্দেশ দেন।

হত্যার বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে শাহীন খাঁন, আমতলী উপজেলা বিএনপি, অঙ্গ সংগঠন ও সর্বস্তরের জনতার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়।

আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- বরগুনা জেলা শ্রমিকদল সভাপতি নাশির মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নাশির উদ্দিন তালুকদার, মকবুল আহম্মেদ খান, পৌর বিএনপির সভাপতি জালাল উদ্দিন খান, উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি সোয়েব ইসলাম হেলাল, সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান ও সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জালাল মৃধা প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমতলী সদর ইউনিয়ন শ্রমিকদল সাধারণ সম্পাদক নিহত শাহীন খাঁন দলের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। তাকে দলীয় কোন্দলের বলি হতে হয়েছে। সন্ত্রাসী কাজল মৃধা, ইসাহাক মৃধা ও শাহারুলসহ যারা নির্যাতন করে হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেছেন তারা। পুলিশকে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বক্তরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সাকিব খাঁন বলেন, ‘ঘটনার দিন রোববার রাত ৩টার দিকে আমার বাড়ির একটু সামনে ডাকাডাকির শব্দ শুনতে পাই। পরে আমি ঘর থেকে বের হই। আমার আসার শব্দ পেয়ে কিছু লোক দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আমি এসে দেখি কাজল মৃধা আমার চাচা শাহীন খাঁনকে লাথি দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দিচ্ছে এবং লাঠি দিয়ে পিটান দেয়। আর পাশে জালাল ফকিরের বাসার বাড়াটিয়া শাহারুল ও তার স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছে। কাজল মৃধা ও তার সহযোগীদের নির্যাতনে আমার চাচা মারা গেছেন।’

নিহত শাহীন খাঁনের স্ত্রী শিউলী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘রাতে আমার স্বামী আমাকে এসে বলেছেন তাকে কাজল মৃধা ও তার সহযোগীরা মারধর করেছে। আমি ওদেরকে ছাড়বো না।’

তিনি আরো বলেন, ‘উপজেলা বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে কাজল মৃধা ও তার সহযোগীরা নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

আমতলী থানার ওসি মো: আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘শাহীন খাঁন হত্যার ঘটনায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে কেউ এ বিষয়ে জানায়নি।’