গোলাম পরওয়ার

জাতীয় নির্বাচনের আগে পিআর পদ্ধতিকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে তার আলোকে গণভোট দিয়েই জাতীয় নির্বাচন দিন। জনগণ পিআর পদ্ধতি মেনে নিলে তার আলোকেই নির্বাচন মেনে নিতে হবে।

গোলাম রব্বানী, কয়রা (খুলনা)

Location :

Khulna
খুলনার কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ মাঠে ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুলনার কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ মাঠে ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার |নয়া দিগন্ত

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার মধ্যে পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে উল্লেখ করে বাাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অস্থিরতা বাড়ছে।

দু'একজন উপদেষ্টা এবং প্রশাসনের কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করে একটি দলকে ক্ষমতায় নেয়ার চেষ্টা করছেন। তারা কেমন যেন একটা চাপের মধ্যে আছেন। তবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের গোপন পথ ছেড়ে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে তিনি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে তার আলোকে গণভোট দিয়েই জাতীয় নির্বাচন দিন। জনগণ পিআর পদ্ধতি মেনে নিলে তার আলোকেই নির্বাচন মেনে নিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনের আগেই প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রমাণ দেয়া, যে ১৪ দলীয় জোট ফ্যাসিস্টকে টিকিয়ে রেখেছিল তাদের বিচার দৃশ্যমানসহ জামায়াতের ৫ দফা মেনে নিয়েই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হবে।

তিনি শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে খুলনা জেলার পাইকগাছা সরকারি কলেজ মাঠে এবং বিকেলে কয়রা কপোতাক্ষ কলেজ মাঠে স্থানীয় জামায়াত আয়োজিত দুটি ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

সমাবেশে মিয়া গোলাম পরয়ার আরও বলেন, চব্বিশের গণ আন্দোলনের ছাত্র-জনতার যুদ্ধ ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আর আমাদের দ্বিতীয় যুদ্ধ হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই দ্বিতীয় যুদ্ধে ছাত্র-জনতাকে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে পাঠাতে হবে। বিগত সময়ে জামায়াতে ইসলামী ৩টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে একটি টাকাও দূর্নীতি কোন সংস্থা খুঁজে পায় নি। এদেশের মানুষ সব দলকে দেখেছে এবার ইসলাম পন্থী নির্বাচিত করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে ইনশাআল্লাহ।

এসময় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর একটি রাজনৈতিক দল মনে করেছিল আগের মতো যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে তারা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় চলে যাবে। এজন্য ফ্যাসিবাদের আমলে যতনা তাদের নেতাকর্মী খুন হয়েছে তার চেয়ে বেশি অন্তর্কলহে ৫ আগস্টের পর দলীয় নেতাকর্মী খুন হয়েছে। সুতরাং এ থেকেই মানুষ বুঝে গেছে তারা ক্ষমতায় গেলে দেশের কি অবস্থা হবে। এজন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার বার তাদের ভোট বিপর্যয় ঘটছে। এতে তারা এখন আর ভোটে আসতেও ভয় পাচ্ছেন। ওই দলটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন না চাওয়ার কারণ হচ্ছে আগে জাতীয় নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে আগের ন্যায় যেনতেনভাবে নির্বাচন দিয়ে ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করবে। কিন্তু তারা বড় দল হতে পারে কিন্তু মানুষ এখন আর তাদের বিশ্বাস করে না। মানুষ এখন পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে। সেই জোয়ারে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় খুলনা-৬ আসনের জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী ও জামায়াতের খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে সুন্দরবন জেলা গঠনসহ ২০ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী জোট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে কয়রা-পাইকগাছার যোগাযোগের দুরাবস্থা দূর করা হবে। যারা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের সমালোচনা করছেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা পিআর বোঝেন না তাদের রাজনীতি করার কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার দরকার নেই। প্রবাসীদেরকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি এলাকার উন্নয়নে তাদের অবদান রাখার আহবান জানান।

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমাকে গ্রেফতার করে জেনে রাখা হয়েছিল ২৪ সালে হয়েছে আমি আর ডামি নির্বাচন। মানুষ আশায় বসে আছে ২৬ সালের নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। কিন্তু সেই নির্বাচনকেও বানচাল করার পায়তারা চালাচ্ছে একটি বিশেষ দল।

পাইকগাছার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সাইদুর‌ রহমান এবং কয়রার সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আমির মাওলানা মিজানুর রহমান। এসব সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা গোলাম সরোয়ার, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু জার আল গিফারী, খুলনা মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, গাউসুল আযম হাদী, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম লিটন, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অডভোকেট লিয়াকত আলী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম , অধ্যাপক নূরুজ্জামান মল্লিক, জেলা ইউনিট সদস্য মাওলানা শেখ কামাল হোসেন, কাজী তামজীদ আলম, অডভোকেট আব্দুল মজিদ, অধ্যাপক আব্দুল মোমিন, পাইকগাছা উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি আহম্মদ আলী, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা বুলবুল আহম্মদ, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল খালেক, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা নূরে আলম সিদ্দিকী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আব্দুল হান্নান ও মাওলানা আব্দুস সবুর, পৌরসভা আমির ডা. আসাদুল হক ও সেক্রেটারি মিজানুর রহমান, পাইকগাছা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও পাইকগাছা বাজার কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অমরেশ চন্দ্র মন্ডল,কয়রা-পাইকগাছা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি এস এ মুকুল, খুলনা উওর জেলা সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির, দক্ষিণের সভাপতি আবু জার গিফারি, সেক্রেটারি ওয়েসকুরুণী, জামায়াতের উপজেলা নায়েবে আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।