কুলাউড়ায় প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে খাসিয়াপুঞ্জিসহ গ্রাম এলাকায় আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। উপজেলা হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি রোগীর স্বজন ও স্থানীয়দের।
কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া হাসপাতালে ১৬ নভেম্বর নতুন করে দুইজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। মোট ৩০ জন রোগী শনাক্ত হলে ২৫ জনকে হাসপাতালে চালু হওয়া ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হয় এবং পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেটে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালে সাতজন রোগী ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে পাশের বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেল কাউন্টার চালু থাকলেও কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেল কাউন্টার মেশিন নেই। সিবিসি পরীক্ষায় প্লাটিলেট কাউন্ট দেয়া হয় না।
মহামারি আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির ঘাটতি ও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃত ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য নিয়েও লুকোচুরি রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: মো: মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে ডেঙ্গু আক্রান্তের কোনো তথ্য নেই।’ পরিসংখ্যান বিভাগে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ এ টি এম আনোয়ার গাজী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে মৌলভীবাজারে ৪১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তন্মধ্যে কুলাউড়া ১৬, শ্রীমঙ্গল ১ ও সদর উপজেলায় ২৪ জন রোগী রয়েছেন। বেসরকারীভাবে সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
ব্রাহ্মণবাজার মিশন হাসপাতালের পরিচালক ডেভিড পাহান বলেন, ‘গত দুই-তিন মাসে মিশন হাসপাতাল থেকে ১২০ জন চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন। বর্তমানে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন।’
গত মাস দেড়েক সময় থেকে উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের প্রায় ১৫-২০টি খাসিয়া পুঞ্জি ও কয়েকটি গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক বাসিন্দা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কুলাউড়া উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সীমান্তবর্তী উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা হাসপাতালে ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাজার মিশন হাসপাতালে অর্ধশতাধিক, রবিরবাজারে স্থানীয় চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম সোহাগের চেম্বারে ২০ জন ও চিকিৎসক ফরিদ আহমদের চেম্বারে ২৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নেন বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: জাকির হোসেন।
এছাড়া ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধি ও আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে আনতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ১৫ নভেম্বর কর্মধা ইউনিয়নে ৩০০ শতাধিক মশারি বিতরণ এবং কুলাউড়া পৌরসভার উদ্যোগে শহরে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো: মহিউদ্দিন। এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান।
খাসিয়া পুঞ্জির লোকজন মনে করছেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে পর্যটকরা কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে অবস্থিত কালাপাহাড় ও খাসিয়াপুঞ্জিতে ঘুরতে আসেন। এছাড়া পুঞ্জির বাসিন্দা অনেক শিক্ষার্থী ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করছেন। অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পুঞ্জিতে চলে আসে বিশ্রামের জন্য। এসব কারণে পাহাড়ি পুঞ্জিগুলোতে ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়েছে।
এদিকে কুলাউড়ার সচেতন মহলের দাবি, যেহেতু কর্মধা ইউনিয়নে সর্বাধিক হারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাই সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে অনুসন্ধান ও পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় ছাড়াও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো দরকার।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কুকিজুড়ি পুঞ্জিতে ৫০ জন, ডলুছড়া পুঞ্জিতে প্রায় ৭০ জন, লবনছড়া পুঞ্জিতে প্রায় ৬০ জন, নুনছড়া পুঞ্জিতে ৫০ জন, কুকিবাড়ি পুঞ্জিতে প্রায় ১০জন আক্রান্ত হয়েছেন।
কর্র্মধা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও কুকিবাড়ি পুঞ্জির বাসিন্দা সিলভেস্টার পাটাং বলেন, ‘গত চার সপ্তাহ আগে আমার ছোটভাই জেরবাস (৪০) গত ১০ নভেম্বর পাশের লুথিজুড়ি পুঞ্জির বাসিন্দা তিতুশ জিব্রা (৪২) ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ নিয়ে মারা গেছেন। তন্মধ্যে জেরবাস বাড়িতে ও তিতুশ সিলেটে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান।’
তিনি আরো বলেন, ‘কর্মধা ইউনিয়নের পাহাড়ি খাসিয়া পুঞ্জিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ঘরে ঘরে জ¦র, বমি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দুর্গত এলাকা থাকায় অনেকেই উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’ পুঞ্জিগুলোতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারিভাবে ক্যাম্প পরিচালনা করার দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: জাকির হোসেন বলেন, ‘কুলাউড়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আক্রান্তদের বিনামূল্যে পরীক্ষা করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত পুঞ্জিগুলোতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে হবে এবং সর্বোচ্চ সর্তক থাকতে হবে।’



