শ্রমিক তোফাজ্জল হত্যা

অভ্যুত্থানের ৭ মাস পর হা‌সিনা-কা‌দেরসহ ৩৯৫ জনকে আসামি ক‌রে মামলা

গ্রেফতার ১

নিজেকে তোফাজ্জলের ‘সহযোদ্ধা’ দাবি করে শুক্রবার (২১ মার্চ) ভালুকা থানায় মামলাটি করেন শরিফ নামের এক ব্যক্তি।

ময়মনসিংহ অফিস
শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের
শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের |ফাইল ছবি

ময়মনসিংহের ভালুকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তোফাজ্জল হোসেন (২২) নামের এক শ্রমিককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সাত মাস (২২৯ দিন) পর থানায় মামলা হয়েছে।

নিজেকে তোফাজ্জলের ‘সহযোদ্ধা’ দাবি করে শুক্রবার (২১ মার্চ) ভালুকা থানায় মামলাটি করেন শরিফ নামের এক ব্যক্তি।

মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ২৪৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তোফাজ্জল নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতি গ্রামের মৃত আবদুর রশিদের ছেলে। তবে তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা এলাকায় মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে বসবাস করতেন এবং রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। অন্যদিকে মামলার বাদি শরিফ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের মাটির মসজিদ এলাকার বাসিন্দা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৪ আগস্ট ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকায় একটি মিছিলে যোগ দেন তোফাজ্জল। সন্ধ্যায় শ্রীপুরের জৈনা বাজার থেকে একটি মিছিল ভালুকার মাস্টারবাড়ি এলাকায় পৌঁছলে সেটি প্রতিহত করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেন তারা। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতাল ও পরে শ্রীপুরের একটি হাসপাতালে পাঠানো হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পরে গত বছরের ৬ আগস্ট কেন্দুয়ার নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।

ঘটনার প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও তোফাজ্জল হত্যা নিয়ে কোনো মামলা করেনি পরিবার। তার মৃত্যুর পর শ্রীপুর থেকে কেন্দুয়ায় চলে গেছে পরিবারটি। পরিবার মামলা না করলেও ভালুকায় তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীদের দায়ী করে কিছুদিন ধরেই কর্মসূচি করে আসছেন আন্দোলনকারীরা।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তোফাজ্জলের ছোট ভাই মোফাজ্জল হোসেন শনিবার (২২ মার্চ) সকালে জানান, ‘আমাদের লোকজন নাই, গরিব মানুষ, এ কারণে ঝামেলায় যাই নাই।’

তোফাজ্জলের শরীরে কী ধরনের আঘাত ছিল- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘লাশ বাড়িতে আনার পর দেখেছি, ভাইয়ের শরীরে কোপের আঘাত বেশি। এগুলো পায়েই ছিল বেশি। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।’

মামলাটির বাদি শরিফের মোবাইলফোনে আজ শ‌নিবার সকালে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আমি অংশগ্রহণ করি এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। ভিকটিমের (নিহতের) মা ও তার পরিবার অত্যন্ত গরিব। তাই তারা মামলা করতে সাহস পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় আমি ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাদি হয়েছি।’

ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘তোফাজ্জল হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার জন্য পরিবারের সাথে আমরা অসংখ্যবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা মামলা করতে সম্মত হয়নি। শুক্রবার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন বাদি হয়ে মামলা করেছেন। ওই মামলায় এজাহারভুক্ত সিড‌স্টোর এলাকার আ‌জিজুল (৪০) না‌মের এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হ‌য়ে‌ছে। মামলা‌টি তদন্ত কর‌ছেন অফিসার ইনচার্জ নি‌জেই। এখন বিধি মোতাবেক সব পদক্ষেপ নেয়া হ‌বে।’