তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপরে, প্লাবিত লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তৃতীয় দফায় লালমনিরহাট জেলার তিস্তার বাম তীরের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট

Location :

Lalmonirhat
বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপরে তিস্তার পানি
বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপরে তিস্তার পানি |নয়া দিগন্ত

টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তৃতীয় দফায় লালমনিরহাট জেলার তিস্তার বাম তীরের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) বেলা ৩টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি সমতল রেকর্ড করা হয় ৫২.১৯ মিটার, যা বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপরে।

এদিকে একই দিনে সকাল ৬টায় ওই পয়েন্টটিতে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল পানি। পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছিল ৫২.২২ মিটার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গত সপ্তাহে বিপদসীমা অতিক্রম করে নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। পরে একদিন পানি কমলেও গত মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে তা আবারো বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর বিপদসীমার পানি বাড়েতে থাকে। এ অবস্থায় নদীপাড়ের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

নদীপাড়ের মানুষ ও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সোমবার (১১ আগস্ট) রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। যা নদীর পানি বাড়া-কমার মধ্যে অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। এরমধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী ও সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু অঞ্চল প্লাবিত হয়।

এদিকে পানি প্রবাহ যত বাড়বে বন্যার শঙ্কা ততই বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে তিস্তার বাম তীরের লালমনিরহাটে তৃতীয় দফায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানির চাপের কারণে বেশ কিছু রাস্তা ও বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারীতে ইস্ট্রাকো সোলার প্যানেল এলাকা ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এ স্থানে তিস্তা নদীর মূলস্রোত ধারা বন্ধ করে সোলার প্যানেল স্থাপন করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করতে রাস্তাগুলোতে চাপ পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সামসুল আলম বলেন, ‘সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ লোকালয়ের রাস্তা ও বাঁধে পড়ছে। এগুলো রক্ষা করা না হলে হাজারো বসতভিটা আর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে। তখন নদী এসে উপজেলা শহরে পৌঁছাবে।‘

তিস্তাপাড়ের গোবর্দ্ধন গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সকাল থেকে তিস্তার নদীর পানি বেড়ে চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ডুবে যাচ্ছে। মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আকাশের পানি আর নদীর পানি মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।’

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের সেলিম ইসলাম বলেন, ‘নিচু এলাকায় পানি ঢুকেছে। এতে পরিবারগুলো পানিবন্দি হওয়ার সাথে রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। ফলে পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে মানুষ। বাড়িতে পানি ঢুকছে, কিন্তু কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। প্রশাসনের দ্রুত সহযোগিতা কামনা করছি।’

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, ‘পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলেই আমার ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের দেড় হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, ‘গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়দের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।‘