রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও উজানচর এলাকায় মরা পদ্মায় অবৈধ ড্রেজারে বালি মাটি উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। প্রতিবছর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছত্র ছায়ায় ওই অবৈধ বালু মাটি ব্যবসা চলে আসছিলো। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ায় দৌলতদিয়ায় ওই অবৈধ মাটি ব্যবসাসহ সকল অপকর্ম প্রশাসনিক তদবির কারকের অভাবে কিছুদিন স্থগিত ছিলো। বর্তমানে আবার ওই অপকর্মের হোতারা হঠাৎ তৎপর হয়ে উঠেছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষকের শতশত একর ফসলি জমি। উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ করে প্রতিকার না পাওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (৮ আগস্ট) দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৪নম্বর ওয়ার্ডে সৈদাল পাড়া, ফকির পাড়া, বেপারী পাড়া ও দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের পাশে পাঁচটি ড্রেজারে বালু মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।
ওই অবৈধ ড্রেজার গুলোর মালিক উজানচর ভোলাই মাতুব্বর পাড়ার লাভলু, সৈদাল পাড়ার রফিক, সোনা উল্লা পাড়ার হাবি, বেপারী পাড়ায় আ: সালাম, উজানচর ভাদাইমের মোড়ের ইসমাইল, সৈদাল পাড়ার ইসমাইল বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানের সময় সৈদাল পাড়ার শাহিন মন্ডল, শহিদুল শেখ, রুহুল শেখ, আসলাম শেখ, আমিরুল মৃধা, লিটন সরদারসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন, পানির নীচ দিয়ে আমাদের জমির মাটি কেটে তারা লাখ লাখ টাকার অবৈধ ব্যবসা করে চলেছে। আমরা কিছুই কইতে পারি না। কিছু কইলে উল্টো আমাদের থানা পুলিশের ভয় দেখায়। এতোদিন আওয়ামী লীগ নেতারা যা করতো এখন বিএনপি নেতারাও তাই করে চলেছে। উপজেলা প্রশাসনের কাছে গেলেও কোনো লাভ নাই। ঘুষের টাকা কম পড়লে তারা আসে। দুই চারটা পাইপ ভাংগে কয়েকদিন বন্ধ থাকে। আবার তাদের টাকা দিলে আবার রাতদিন চলতে থাকে।
এ ছাড়া দৌলতদিয়া ৭নম্বর ফেরিঘাট হতে প্রায় ৩ কিলোমিটার পূর্বে কলাবাগানের পাশে ৩টি ড্রেজার মেশিনের পাইপ প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মাটির নীচ দিয়ে বসানো হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে বর্ষা মৌসুম ও শুষ্ক মৌসুমসহ সারা বছরই বালি মাটি উত্তোলন করা হয়। ওই ড্রেজারের পাইপের সাথে স্যালো মেশিন সেট করে বালি ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। ওই মেশিনের সাথে মাইলের পর মাইল পাইপ সেট করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে।
এ সময় ড্রেজারে কর্মরত শ্রমিকরা নিজেদের নাম প্রকাশ না করে জানায়, ওই ড্রেজার গুলো গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির এক নেতার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। ওই নেতার মাধ্যমে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে তারা ওই বালু মাটি ব্যবসা করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নাহিদুর রহমান বলেন, ‘অতিদ্রুত ওই অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এর সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’