পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে

বেসরকারি ৬ ট্রেনে নেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী, যাত্রীরা দুর্ভোগে

‘আমাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন টেন্ডার রেল কর্তৃপক্ষ বাতিল করেছে। তাই লোকবল কাজে লাগানোর সুযোগ নেই।’

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা

Location :

Ishwardi
বেসরকারি ৬ ট্রেনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী না থাকায় যাত্রী দুর্ভোগ চরমে
বেসরকারি ৬ ট্রেনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী না থাকায় যাত্রী দুর্ভোগ চরমে |নয়া দিগন্ত

দেশের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ছয় বেসরকারি ট্রেনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। যাত্রীরা অভিলম্বে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ দিয়ে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেন ভ্রমনের দাবি জানান।

জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার যাত্রী এসব রুটে চলাচল করে। কিন্তু গত এক মাস ধরে ট্রেনে নেই কোনো পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ফলে চলন্ত ট্রেনে নোংরা টয়লেট, দুর্গন্ধ, বর্জ্যপানি, মশা আর অসহ্য পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

রেল সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলের ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োজিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নতুন কোনো চুক্তি না হওয়ায় তারা আর কাজে ফিরতে পারেননি। ফলে চলন্ত ট্রেনের অভ্যন্তরে টয়লেট পরিষ্কার, সাবান-টিস্যু সরবরাহ, মশা তাড়ানোর স্প্রে কিংবা দুর্গন্ধ রোধে এয়ার ফ্রেশনার সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে।

এসব আন্তঃনগর ট্রেনগুলো হলো ঢাকা-খুলনা রুটের চিত্রা এক্সপ্রেস, খুলনা-ঢাকা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস, খুলনা-চিলাহাটী রুটের রূপসা এক্সপ্রেস, চিলাহাটী-খুলনার সীমান্ত এক্সপ্রেস এবং খুলনা-রাজশাহী রুটের কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস।

ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘ যাত্রাপথে শৌচাগারগুলো ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এসি চেয়ার, এসি কেবিন ও সাধারণ কোচে দুর্গন্ধে বসে থাকা যায় না। টয়লেট ও বেসিনের পানি উপচে পড়ে ছড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে। ফলে, যাত্রীদের নাকে রুমাল চেপে বসে থাকতে হচ্ছে।

চিত্রা এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী যাওয়ার পথে যাত্রী ইলিয়াস আহমেদ বলেন, ‘আরামের আশায় এসি চেয়ার কোচে উঠেছিলাম, কিন্তু দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই পাইনি।’

একই ট্রেনের যাত্রী মাহমুদা খানম বলেন, ‘টয়লেট ব্যবহার করতে না পেরে যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রেন কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।’

চিত্রা এক্সপ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র টিটিই আবদুল আলীম বিশ্বাস মিঠু জানান, ট্রেনে পরিচ্ছন্নতাকর্মী না থাকায় যাত্রীসেবায় মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন যাত্রীদের কটুকথা শুনতে হচ্ছে।

এদিকে, কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন বহু পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাদের একজন মধু হাসান বলেন, ‘ট্রেনে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পালন করতাম। এক মাস ধরে কাজ নেই। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’

ওয়াকিল আহমেদ ও কালীদাসসহ অন্যরাও একই হতাশা প্রকাশ করেন।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পদ্মা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম সুলতান বলেন, ‘আমাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন টেন্ডার রেল কর্তৃপক্ষ বাতিল করেছে। তাই লোকবল কাজে লাগানোর সুযোগ নেই।’

এ বিষয়ে পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ মুহূর্তে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাতিল করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আপাতত কিছুই করার নেই। দুই মাস এ অবস্থাই থাকবে।’

যাত্রীদের অভিযোগ ট্রেনের ভাড়া তো কমছে না, তাহলে কেন কমছে সেবা? পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে দ্রুত দুর্ভোগ লাঘবে রেলের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে যাত্রীরা।