মানিকগঞ্জের ঘিওরে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য- সম্মিলিত মৎস্য শিকার উৎসব পলো বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শীতের আগমনী বার্তায় বৃষ্টির পানি কমতে শুরু করলে গ্রামীণ জনপদে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে, এ পলো বাইচ যেন তারই এক বর্ণিল প্রতিচ্ছবি।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ভোর থেকে উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বাসুদেববাড়ী সংলগ্ন শ্যামপুর বৃহত্তর বিলে এলাকাবাসীর উদ্যোগে পলো বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
নির্ধারিত সময়ের সাত দিন আগে থেকে বিভিন্ন হাট বাজারে চলে প্রচারণা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এক হাজারেরও বেশি পেশাদার ও শৌখিন শিকারি পলো, ঝাঁকি জাল, টানা জালসহ বিভিন্ন দেশীয় উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধভাবে পানিতে নেমে পড়েন। বিলজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
আয়োজকরা জানান, সুদীর্ঘকাল ধরে এখানে পলো বাইচের আয়োজন করে আসছে পয়লা, বাসুদেব বাড়ি, শ্যামপুরসহ আশেপাশের কয়েক গ্রামের অধিবাসীরা।
পলো বাইচ ঘিরে আশপাশের গ্রামগুলো থেকে হাজারো মানুষের ভিড় জমে। শিশু–কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবাই মেতে ওঠেন উৎসবের আনন্দে। লোকজ সংস্কৃতির এমন বিরল দৃশ্য দেখতে এসে দর্শনার্থীরাও হয়ে ওঠেন আনন্দ-উচ্ছ্বাসের অংশীদার।
উৎসবে শিকারিদের জালে ধরা পড়ে বোয়াল, গজার, শোল, ট্যাংরা, পুঁটিসহ নানা জাতের দেশি মাছ। মৎস্য শিকারিদের মুখে-মুখে তাই ছিল আনন্দ আর তৃপ্তির গল্প।
শিবালয় থেকে আগত মৎস্য শিকারি সুরেশ রায় বলেন, ‘পলো বাইচ আমাদের বাপ-দাদার আমলের ঐতিহ্য। এখন খাল-বিল কমে যাওয়ায় এ ধরনের আয়োজনও কমে গেছে। তবুও বছরের এ একটি দিন সবাই মিলে মাছ ধরার যে আনন্দ পাই তার সাথে অন্য কোনো কিছুর তুলনা চলে না। এটি নিছক মাছ ধরা নয়, সম্প্রীতি আর গ্রামীণ বন্ধনের এক অনন্য মিলনমেলা।’
ঘিওরের তরুণ অংশগ্রহণকারী ইশতিয়াক বলেন, ‘বেশ বড় দুটি শোল ও একটি ছোট বোয়াল মাছ ধরেছি। সারা বছর আমরা এ দিনের অপেক্ষায় থাকি। নতুন প্রজন্ম যেন এ ঐতিহ্য ভুলে না যায়, এমন আয়োজন তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
দর্শনার্থী কলেজ শিক্ষার্থী সাদিয়া, মুদী দোকানী রফিকুল ইসলামসহ আরো বেশ কয়েকজন জানান, ‘এত মানুষকে একসাথে আনন্দের সাথে মাছ ধরতে দেখে অসাধারণ লাগছে। উৎসবের পরিবেশ দেখে আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে।’
প্রবীণ আয়োজক মো: শামছ উদ্দিন মাতব্বর বলেন, ‘পলো বাইচকে ঘিরে পুরো এলাকায় বিরাজ করেছে এক অন্যরকম উৎসব- যেখানে মিলেমিশে ছিল, আনন্দ আর গ্রামীণ মনের ভালবাসা।’



