ধর্ম উপদেষ্টা প্রফেসর আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, এ দেশ আমাদের সবার। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সকল ধর্মের জাতি গোষ্ঠীর মানুষকে সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) রাঙ্গামাটির মনোঘর মিলন বৌদ্ধ বিহারে দেশের প্রথম সম্মিলিত জাতীয় কঠিন চীবর দান উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্ট ও পার্বত্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে প্রথমবারের মতো সমতল ও পাহাড়ের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সম্মিলিত জাতীয় কঠিন চীবর দান উৎসবের আয়োজন করে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, দেশের সকল মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে যার যার ধর্ম পালন করে যাবে। তিনি বলেন, বতর্মান সরকার সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সরকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কল্যাণ ও ধর্মীয় কার্যক্রমে সহায়তার অংশ হিসেবে ২ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করেছে। তিনি বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমা শান্তি ও সহমর্মিতার প্রতীক। এই উৎসবের মাধ্যমে সমাজে মানবতা ও সৌহাদ্যের বার্তা আরও বিস্তৃত হবে। এর আগে ফিতা কেটে দানোৎসবের উদ্বোধন করেন ধর্ম উপদেষ্ট। এসময় তার সাথে ছিলেন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি, উন্নয়ন ও সম্প্রীতি গড়ে তুলতে হবে। সরকার সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল এবং ধর্মীয় উৎসবগুলো নির্বিঘ্নে পালনের জন্য সব সময় সহযোগিতা করছে।
পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি, উন্নয়ন ও পারস্পরিক সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, উপজাতীয় নেতা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ নাগরিকদের সমন্বয়ে এক সাথে কাজ করার আহবান জানান উপদেষ্টা।
পার্বত্য উপদেষ্টা আরো বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে আপনারা সহযোগিতা করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের অন্যতম ভিত্তি,আর এই নির্বাচনকে সফল করতে আপনাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পার্বত্য উপদেষ্টা আরো বলেন, নির্বাচনের সময় কেউ যেন ভ্রান্ত তথ্য, বিভ্রান্তি বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সরকারের উদ্দেশ্য হলো—একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
সি এইচ টি, সুপ্রিম সংঘ কাউন্সিলর ও সংঘ প্রধান ভদন্ত শ্রদ্ধালঙ্কার মহাথেরোর সভাপতিত্বে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি মং হ্লা চিং রাখাইন, গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সাংগঠনিক সচিব প্রফেসর ড. সুব্রত বরণ বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সুকোমল বড়ুয়া, প্রবেশ চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদারসহ অন্যান্যরা বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
রাঙ্গামাটিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত সম্মিলিত জাতীয় কঠিন চীবর দানোৎসবে তিন পার্বত্য জেলা ও সমতলের ভিক্ষু সংঘ ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ সমবেত হয়।
রাঙ্গামাটি শহরের রাঙ্গাপানি মিলন বিহার সংলগ্ন মোনঘর মাঠে দুই দিনব্যাপী চলে এই উৎসব । শুক্রবার বিকাল থেকে শুরু হয়ে শনিবার শেষ হয় ঐতিহাসিক এ দানোৎসব।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত তিন শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষুর অংশগ্রহণে এই দানোৎসব পাহাড় ও সমতলের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঐক্য ও সংহতির এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।