রাজশাহীতে তানোর উপজেলায় পরিত্যক্ত একটি গভীর নলকূপের গর্তে আটকে পড়া দু’বছরের শিশু সাজিদকে উদ্ধারে দীর্ঘ ২১ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চলছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও স্থানীয় লোকজন এখনো তাকে উদ্ধারে সক্ষম হননি। শিশুটিকে উদ্ধারে টানা উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে তিনটি এস্কেভেটর দিয়ে গর্তের পাশের মাটি খনন করা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট। উদ্ধার তৎপরতা দেখতে কয়েক হাজার মানুষ সারারাত নির্ঘুম রাত কাটান মাঠে। শিশুটিকে উদ্ধারে ৩০ ফুট গভীর গর্তে কয়েক দফা ক্যামেরা পাঠানো হয়েছে। ওপর থেকে পড়া মাটি ও খড়ের কারণে শিশুটিকে দেখতে পাননি উদ্ধার অভিযানের অংশ নেয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
স্থানীয়রা জানায়, জমির মালিক কছির উদ্দিন বছরখানেক আগে জমিতে সেচের জন্য একটি সেমিডিপ নলকূপ বসানোর চেষ্টা করেন। ওই সময় ৩৫ ফুট বোরিং করার পরও পানি পাননি। তাই আর নলকূপ বসানো হয়নি। একবছর ধরে আট ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গর্তটি সেভাবেই পড়ে রয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
শিশুটির নাম মো: সাজিদ। তার বাবা রাকিবুল ইসলাম তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট গ্রামের বাসিন্দা। রাকিবুল ইসলাম ঢাকায় থাকেন।
এদিকে শিশু সাজিদকে উদ্ধার তৎপরতা দেখতে হাজারো মানুষ ভিড় করেছেন। নারী, পুরুষসহ বিভিন্ন বয়েসী মানুষ সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে চুপ করে বসে আছেন সাজিদের মা রুনা খাতুন।
সাজিদের মা রুনা জানান, তার তিন ছেলে। এর মধ্যে দু’বছরের সাজিদ মেজ। তাদের একটি ট্রলি মাটিতে দেবে গেলে ছোট ছেলে সাদমানকে কোলে নিয়ে আর সাজিদের হাত ধরে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। ফেরার সময় অসাবধানতাবশত সাজিদ ওই গর্তে পড়ে যায়।
রুনা বলেন, ‘আমি সামনে হাঁটছিলাম, আর সাজিদ পেছনে। একটু পর পেছনে ঘুরে দেখি, সাজিদ আর নেই। শুধু মা মা ডাক শুনতে পাচ্ছি।’
সাজিদের মা জানান, গর্তের মুখে খড় ছিল। তাই গর্ত ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছিল না।
ফায়ার সার্ভিসের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বুধবার রাতে জানিয়েছিলেন, শিশুটি জীবিত আছে বলে মনে হচ্ছে। তাকে অক্ষত উদ্ধারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান বলেন, ‘বাচ্চাটির গর্তে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সবাই দোয়া করুন, বাচ্চাটি যেন দ্রুত উদ্ধার হয়ে মায়ের কোলে ফিরতে পারে।’



