পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না : চরমোনাই পীর

‘পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না। জবাবদিহীতামূলক সরকার কায়েম হবে। জবাবদিহীতার অভাবেই ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়।’

এরশাদ আলী, খুলনা ব্যুরো

Location :

Khulna
গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন রেজাউল করীম
গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন রেজাউল করীম |নয়া দিগন্ত

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘পি আর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না। জবাবদিহীতামূলক সরকার কায়েম হবে। জবাবদিহীতার অভাবেই ফ্যাসিবাদ তৈরি হয়।’

শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে নগরীর শিববাড়ী মোড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রেজাউল করীম বলেন, ‘১৫ বছরের পতিত ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোঁয়া এখনো দেশকে অনিরাপদ করে রেখেছে। পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেয়ার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। একইসাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনায়, বক্তব্যে ও মন্তব্যে শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ কোনো অবস্থাতেই পতিত ফ্যাসিবাদকে কোনো সুযোগ করে দেয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে দেশ গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন বলে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সেই সংস্কার হতে হবে রাষ্ট্রের কাঠামোতে, আইনে এবং রাজনৈতিক দলের চরিত্র ও সংস্কৃতিতে। রাষ্ট্রের কাঠামো ও আইনি সংস্কারের কাজ কিছুটা অগ্রগতি হলেও রাজনৈতিক চরিত্র ও সংস্কৃতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে নাই। ৫ আগস্টের পরে রাজনৈতিক হানাহানিতে নিহত-আহত মানুষের সংখ্যা শুনে আঁতকে উঠতে হয়। চাঁদাবাজি কোনো অর্থেই কমে নাই। সন্ত্রাসও কমে নাই বরং রাজনৈতিক পরিচয়ে ধর্ষণের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মিডফোর্ট হাসপাতালের সামনে যে বর্বরতায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তার প্রতিবাদে জনতা ফুঁসে উঠেছে স্বাভাবিক কারণেই। জনতার সেই প্রতিবাদকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বর্বর সেই হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করে ফেলা হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে মানুষ এ ধরনের রাজনীতি আর দেখতে চায় না। এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িতদের একটা বড় অংশ বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিএনপি থেকে তাদের বহিষ্কারের মাধ্যমে এটা প্রমাণিতও বটে।’

বিএনপি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘কর্মীদের অপরাধের দায়ভার দল হিসেবে আপনাদের বহন করতেই হবে। চাঁদাবাজরা বিএনপির সাথে সম্পৃক্ততা দেখিয়েই জনতার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। তাই জনতার ক্ষোভ বিএনপির প্রতি হবে এটাই স্বাভাবিক। জনতার এ প্রতিবাদকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে দলের ভেতরে থাকা অপরাধীদের চিহ্নিত করুন। অপরাধ ঘটার আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ও খুলনা- ২ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুফতী আমানুল্লাহর সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা যারা ছিলাম, তাদের বলবো আসেন জাতির কমন ইস্যুতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাই। মানবতাবিরোধী অপরাধের ফ্যাসিস্ট হাসিনা যা করেছেন, জাতির উপরে নির্বাচনের আগে তার বিচার দৃশ্যমান না হলে এদেশের জনগণ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। সংস্কার চাই, পিআর চাই। আমরা আরো দাবি করেছি, জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রমাণের জন্য স্থানীয় নির্বাচন আগে দিতে হবে। জাতি এখন দু’ভাগে বিভক্ত। একভাগ কোরআনের শাসন কায়েমের পক্ষে। অন্যপক্ষ বিদ্যমান শাসন চালু রাখতে চায়।’

বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার করা, পতিত ফ্যাসিবাদের সাথে জড়িতদের বিচার দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, বন্ধ মিল-কলকারখানা চালু ও ইসলামী সমাজভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ও খুলনা ৪- আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ, নায়েব আমির হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) মুফতী মোস্তফা কামাল, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শুয়াইব হোসেন, খুলনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল্লাহ ইমরান প্রমুখ।

মহানগর সহ-সভাপতি শেখ মো: নাসির উদ্দিন, জেলা সেক্রেটারি হাফেজ আসাদুল্লাহ আল গালিব ও মহানগর সেক্রেটারি খুলনা- ৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুফতি ইমরান হোসাইনের যৌথ পরিচালনায় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

পরে খুলনার ৬ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাত পাখার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।