লে. কর্নেল জুবায়ের আনোয়ার

সাদাপাথর লুটে বিজিবি সদর দফতর থেকেও তদন্ত টিম কাজ করছে

‘প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে জৈন্তাপুরের লালাখাল বিওপিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

আবদুল কাদের তাপাদার, সিলেট ব্যুরো

Location :

Sylhet
গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুবায়ের আনোয়ার
গণমাধ্যমের সাথে কথা বলছেন বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুবায়ের আনোয়ার |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুবায়ের আনোয়ার জানিয়েছেন, সাদাপাথর লুটপাটে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তদন্ত করছে এবং বিজিবি তাদের নিয়মিত সহযোগিতা করছে। সদর দফতর থেকেও তদন্ত টিম কাজ করছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি জানান, সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর ও লালাখাল এলাকায় জাতীয় সম্পদ বালু ও পাথরের অবাধ লুটপাট বন্ধে বিজিবি কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে।

শনিবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে জৈন্তাপুরের লালাখাল বিওপিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযানের কারণেই এ এলাকায় বর্তমানে কোনো অবৈধ বালি-পাথর উত্তোলন হচ্ছে না। বিজিবির উপস্থিতির ফলে সীমান্তঘেঁষা এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্পট এখনো পর্যটকদের জন্য সুরক্ষিত রয়েছে।’

বিজিবি-১৯-এর অধিনায়ক জানান, ‘ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দি ও জৈন্তাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শূন্যরেখা থেকে আনুমানিক ৩০০ গজ পর্যন্ত এখনো বিপুল পরিমাণ পাথর অক্ষত আছে। ফলে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন। একইভাবে লালাখাল এলাকায় বিজিবির টহল অব্যাহত থাকায় আসন্ন শীত মৌসুমেও পর্যটকরা নিশ্চিন্তে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।’

প্রেস ব্রিফিংয়ে অধিনায়ক জানান, ‘শুধু গত চার মাসে বিজিবি ৪০০ থেকে ৬০০ অবৈধ বালু-পাথরবাহী নৌকা আটক করেছে। শুধু লালাখাল নয়, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর অঞ্চল থেকেও অসংখ্য নৌকা জব্দ করা হয়েছে। এসব অভিযানে গভীর রাতেও বিজিবি সদস্যরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন, যেখানে অনেকেই আহত হয়েছেন। তারপরও দায়িত্বের জায়গা থেকে তারা পিছপা হননি।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার বিজিবিকে সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে। আমাদের সদস্যরা বছরের ৩৬৫ দিন, ২৪ ঘণ্টা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে। মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, মানবপাচার, অবৈধ পণ্য প্রবাহ এবং পুশইন প্রতিরোধে আমরা এককভাবে দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও সীমান্তের নিরাপত্তায় আমাদের সদস্যরা অবিচল।’

অধিনায়ক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়ে বিজিবির অর্জিত সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালায়। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশের সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

অবৈধ পাথর ও বালু পাচারে কারা জড়িত—এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তদন্ত করছে এবং বিজিবি তাদের নিয়মিত সহযোগিতা করছে। সদর দফতর থেকেও তদন্ত টিম কাজ করছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: জুবায়ের আনোয়ার পিএসসি বলেন, ‘আমরা শুধু সীমান্ত নয়, দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায়ও কাজ করছি। এ দায়িত্ব কোনো বাহিনীর জন্য সহজ নয়, তবুও বিজিবি সদস্যরা দেশকে রক্ষা করতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করে না। জনসাধারণ আমাদের পাশে থাকলে দেশের সম্পদ কখনো অবৈধভাবে লুটপাট হতে পারবে না।’

তিনি জানান, ‘বিজিবির এ দৃঢ় অবস্থান স্থানীয় জনসাধারণ ও দেশপ্রেমিক মানুষদের আশ্বস্ত করেছে। অবৈধ লুটপাট বন্ধ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখার এ প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের এক অনন্য নজির।’

তিনি বলেন, ‘সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি মাটি যেমন বিজিবির অক্লান্ত ত্যাগে সুরক্ষিত, তেমনি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদও তাদের নজরদারিতে নিরাপদ।’

অধিনায়ক বলেন, ‘আমাদের শপথ—সীমান্তকে রক্ষা করব জীবন দিয়ে, দেশের একবিন্দু মাটিও হাতছাড়া হতে দেব না। বাংলাদেশ বিজিবির হাতে নিরাপদ, ইনশাআল্লাহ সবসময়ক নিরাপদই থাকবে।’

‘জনসাধারণের প্রত্যাশা, বিজিবির এই অটল অবস্থান ও আত্মত্যাগ দেশের সীমান্ত ও সম্পদকে আগামীতেও সুরক্ষিত রাখবে।’

উল্লেখ্য, শুক্রবার সাদাপাথর পরিদর্শনে এসে পাথর লুটপাটে বিজিবির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোখলেছুর রহমান। তার সাথে এসময় মন্ত্রিপরিষদ গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরাও ছিলেন।