‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ জলপথে টহল ও নজরদারির সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুন্দরবনের জল সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশনাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত হলেও সুন্দরবনের বিস্তৃত জলাভূমি ও নদীবেষ্টিত সীমান্ত এলাকায় স্থলপথে নিয়মিত টহল প্রদান অনেকটাই কঠিন। এই ভাসমান বিওপি চোরাচালান, মানবপাচার, বনজ সম্পদ লুণ্ঠন এবং সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক ও কার্যকর প্রতিক্রিয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।
শনিবার (১৭ মে) বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিজিবির রিভারাইন বর্ডার গার্ড (আরবিজি) কোম্পানির দায়িত্বপূর্ণ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের কাছে বাংলাদেশ-ভারত জল সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং খালের মুখে ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধনের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল জিয়াউল হাসান, বিজিবি যশোর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হুমায়ন কবির, খুলনা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো: মেহদী হাসান চৌধুরী, নীলডুমুর এলাকায় বিজিবি ১৭ ব্যটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো: শাহরিয়ার রাজীব, উপঅধিনায়ক মেজর সুষমিত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটারের সীমান্তের মধ্যে ১৮০ কিলোমিটার নদীমাতৃক, যার মধ্যে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার এলাকা সুন্দরবনের মধ্যে। আগেও দু’টি ভাসমান বিওপি একটি কাঁচিকাটায় অপর আরেকটি আঠারোবেকিতে স্থাপন করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বয়েসিং-এ তৃতীয় ভাসমান বিওপিটি চালু করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্তে কার্যকর জলভিত্তিক নজরদারি নিশ্চিত করতে বিজিবির অধীনে একটি বিশেষ রিভারাইন বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা ভবিষ্যতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। সরকার মনে করে, ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ শুধু একটি স্থাপনা নয় এটি একটি কৌশলগত নিরাপত্তা উদ্যোগ, যা সীমান্ত এলাকায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতিরবাস্তব রূপ। এটি দেশের সীমান্তে ব্যবস্থাপনায় একটি আধুনিক ও কার্যকর নিরাপত্তা সংস্কৃতি গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
এ সময় ভাসমান বিওপি সম্পর্কে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিজিবির একটি রিভারাইন বর্ডার গার্ড কোম্পানি আছে, যেটা মূলত সুন্দরবন এলাকায় পাহারা দেয়া, টহল করা, চোরাচালান প্রতিরোধ করা, যেকোনো ধরনের অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে কাজ করছে। এই কোম্পানির অধীনে কৈখালিতে একটি স্থল বিওপি এবং কাচিকাটা ও আঠারভেকিতে দু’টি ভাসমান বিওপি আছে।’
তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের রায়মঙ্গল নদী ও বয়েসিং চ্যানেলে দিয়ে চোরাচালানের বেশ বড় একটা চক্র সক্রিয় ছিল। এটা প্রতিরোধ করার জন্য বয়েসিং খালের মুখে আরো একটি ভাসমান বিওপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আজ এই বিওপিটি উদ্বোধনের মাধ্যমে ভাসমান বিওপি তার কার্যক্রম শুরু করলো। এই বিওপির মাধ্যমে সুন্দরবনে চোরাচালান প্রতিরোধসহ সব ধরনের অপরাধ দমন আরো সুন্দর ও সহজতর হবে বলে আশা রাখি।’
সীমান্ত দিয়ে পুশ ইনের ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘সিলেটের বিয়ানীবাজার, শ্রীমঙ্গল, হবিগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রৌমারীর প্রত্যন্ত চর এলাকা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনবসতিহীন এলাকা দিয়ে পুশ ইনের ঘটনা ঘটেছে। পাশের দেশ থেকে প্রতিনিয়তই নিয়ম বহির্ভূতভাবে পুশ ইনের ঘটনা ঘটছে। আজকে সকালেও কিছু পুশ ইন হয়েছে। আমাদের সীমান্তটা এতো বিস্তৃত যে প্রতিটি জায়গায় গার্ড করা সম্ভব না। তারপরও বিজিবি সদস্যরা যথাসাধ্য প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী সাধারণ জনগণ, আনসার ও পুলিশ সদস্যরাও পুশ ইন রোধে বিজিবিকে সহায়তা করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, যদি কোনো বাংলাদেশী নাগরিক ভারতে থেকে থাকে তবে নিয়মমাফিকভাবে হস্তান্তর-গ্রহণের মাধ্যমে ফেরত প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকেও সার্বিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফ্ল্যাগ মিটিং ও প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করেছি। সীমান্তে বিজিবির নিরাপত্তা জোরদার, টহল তৎপরতা ও জনবল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি বিজিবিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য বলা হয়েছে।’
ভাসমান বিওপি উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বেলা ১২টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর বিজিবি-১৭ ব্যাটালিয়নের সদর দফতর পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন এবং কর্মরত বিজিবি সদস্যদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ সময় বিজিবি সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিজিবির যশোর রিজিয়ন কমান্ডার, খুলনা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার, নীলডুমুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, আরবিজি কোম্পানির অধিনায়ক, বিজিবির অন্য পদবির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।